আমার গলায় ছুরি ধরেছিল বাবা : সোয়াদ
ঢাকা জার্নাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলি আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া ‘সুইসাইড নোটের’ বিষয়ে অবশেষ মুখ খুলল ছেলে আয়মান সোয়াদ আহমেদ।
সোমবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে সোয়াদ ফাঁস করে দিয়েছেন, বাবা তানভীর তার গলায় ছুরি ধরেছিলেন। আর এটি শুধু মায়ের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে।
স্ট্যাটাসে সোয়াদ লেখে, ‘অনেকদিন ধরেই আমার কাছে ওই ‘গলায় ছুরি’ ধরার ঘটনাটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। আজকেই বলেই দেই, কী ঘটেছিল ওই দিন।’
‘আম্মা আর আমি বাইরে যেতে চাইসিলাম আমার এক বান্ধবীর বাসায়। সারাদিন প্ল্যানিং করার পর আমি আব্বার কাছে অনুমতি চাইতে গেছিলাম। অনুমতি চাওয়ার সময় আব্বা বলে ‘তোমার আম্মাকে বলো ওর মত চলে যেতে। আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।’ আমি বললাম, ‘আজব তো। আমি আর মা এই জিনিস প্ল্যান করসি। তুমি কেন ইন্টারফেয়ার করতেসো?’ আব্বা বলল, ‘বাপ হিসেবে আমার এই অধিকার আছে’। আমি বললাম, ‘কিন্তু আম্মার সাথে প্ল্যান নষ্ট করার অধিকারও তোমার নাই’। আব্বা বলে ‘মেইন থিং ইজ…তোমাকে ওই মহিলার সাথে যেতে দিব না। গেলে আমার সাথে যাবা, না হলে নাই।’
‘আমি বলি ‘কি এমন করসে যে এত ক্ষতিকর মনে করো আম্মাকে? হ্যাঁ?’ আব্বা কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায়। পরে বাধ্য হয়ে আম্মাকে ফোন দিয়ে বলি যে আমি যেতে পারব না আজকে। মা বলে ‘আমি বুঝছি কি হয়েছে। চিন্তা করিস না বাবা। আর কয়েকটা দিন।’
‘পরে সন্ধ্যা বেলায় আব্বাকে বলি ‘প্ল্যানটা নষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ’। তখনি আব্বা বলে উঠে ‘তুই কি ঝগড়া লাগাইতে চাস? তোর আম্মার মত হয়েছিস’। আমি বলি, ‘আমার আম্মার নামে এইসব কথা বলবা না। খবরদার!’ আব্বা বলে ‘তোর মায়ের সাথে কথা বন্ধ কর, এই কথাগুলাও বন্ধ হয়ে যাবে।’ আমি বলি ‘বন্ধ করবো না’
“আব্বা তখনি রান্নাঘরে গিয়ে একটা বড় চাকু নিয়ে এসে আমার গলায় ধরে বলে ‘কি বললি? শুনতে পাইনি’। বললাম অল্প শুরে ‘বন্ধ করবো না। মেরে ফেলতে চাইলে মারো। আম্মাকে তো আমার সামনে মারার চেষ্টা করেছো। সিউরলি এটাও পারবে।’ আব্বা চাকুটা ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলো। কিছু না বলে চলে যায় ঘরে…।’
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলি আত্মহত্যা করেছেন গত ৯ সেপ্টেম্বর। আত্মহত্যার আগে তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখে রেখে যান। এতে তিনি তার সাবেক স্বামী একই বিভাগেরই শিক্ষক তানভীর আহমদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে লেখেন, ‘সোয়াদকে (ছেলে) যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে- সে যে কোনো সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’
এরপর অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে জলির ছেলে আয়মান সোয়াদ আহমেদকে প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে সোয়াদ মুখ খুলেছে।
ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬।