‘আমাকে গ্রেফতার করা হবে কেনো?’
ঢাকা জার্নাল : ‘আমাকে গ্রেফতার করা হবে কেনো? আমিই যেহেতু মামলার বাদি তাই তদন্তের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্যই আমাকে সেখানে যেতে হয়েছে। তদন্তের বিষয়ে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি ওইসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বাসায় ফিরেছি’, এ কথা বলেছেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাবুল আক্তারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমি ঢাকায় থাকি, রাতে তদন্তের প্রয়োজনে ডিবি কার্যালয়ে যেতে হয়েছিলো, আজ আবারো বাসায় ফিরে এসেছি।
চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে তার স্বামীকে এসপি বাবুল আক্তারকে শুক্রবার মধ্যরাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়ার পর নানারকম সংবাদ প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। তবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা নিজেই।
ডিবি কার্যালয়ে যাওয়া, দীর্ঘসময় সেখানে অবস্থান, মিতু হত্যায় সরাসির জড়িত থাকার অভিযোগে আটক তিনজনের কারো কারো সঙ্গে চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাবস্থায় সোর্সের সম্পর্ক ছিলো এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তার শ্বশুর বাড়ি খিলগাঁও মেরাদিয়া ১২০ নম্বর বাসা থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।বাবুল আক্তারের শ্বশুর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন এবং খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল হোসেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) দেখা করতে বলেছেন বলে বাবুলকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
অবশ্য এরআগে একই দিন বিকালে বেইলি রোডে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে বিসিএস ২৪ তম ব্যাচের ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহন করতে বের হওয়ার সময় এসপি বাবুল আক্তার বাসায় পরিবারের সদস্যদের বলেছিলেন আইজি স্যারের সঙ্গে দেখা করেই ফিরবো।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, , ‘মিতু হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের শনাক্ত ও জিজ্ঞাসাবদের জন্য বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকজন আসামির সামনে মুখোমুখি করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
শনিবার বিকালে ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেছেন, বাবুল আক্তার যেহেতু মামলার বাদি, তাই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানার জন্যই তাকে ডাকা হয়েছিলো। এছাড়া অন্য কিছু না।
গত ৫ জুন সকাল ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি বাবুল আক্তারের পদোন্নতির পর ঢাকায় অবস্থান করলেও তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।
এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে শুরু হয় ব্যাপক তদন্ত। তারই ধারাবাহিকতায় বের হয়ে আসে ঘটনার পেছনের ঘটনা।
গোয়ন্দা সূত্র জানায়, মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে আবু মুছা (৪৫) ও এহতেশামুল হক ভোলা (৩৮) নামে দুই ব্যক্তিকে ইতোমধ্যেই আটক করেছে পুলিশের একটি ইউনিট। এরা দু’জনই এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবে তারা মিতুকে হত্যা করেছে অথবা সাহায্য করেছে। তাছাড়া মিতু হত্যায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার হয়েছে, সেটি নাকি বাবুল আক্তরের সোর্স বিভিন্ন সময় ভাড়া দিতো।
এর মধ্যে আবু মুছা র্দুর্ধষ সন্ত্রাসী। অনেক সময় ভাড়াটে খুনি হিসেবেও কাজ করেন। এসপি বাবুল আক্তারের হাতে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে ভোলাও একজন সন্ত্রাসী ছিলেন। এখন তিনি ৩৫ নম্বর বকশিরহাট ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা। বেশ কিছুদিন ধরে দু’জনই বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। আর এসব বিষয় নিয়েই ডিবি পুলিশ বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলে।
সূত্র আরো জানায়, জঙ্গী দমনে তৎপর কর্মট একজন পুলিশ অফিসারের দিকে শুধু মাত্রই সন্দেহের বশে সবকিছু করা যায়না। অত্যন্ত সুক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এখানে। তাকে ফাঁসানোর বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। এমনও হতে বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যার ঘাতক বানাতে পেছন থেকে কেউ বা কোনো গোষ্ঠি কলকাঠি নাড়ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিতু হত্যায় অপরাধীদের শনাক্তে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে একাধিক বিশেষ ইউনিট সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় চৌকষ অফিসারদের দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন পুলিশ বাহিনীর জন্য চালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতেই থাকছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অবসরে গিয়েছিলেন পুলিশের ওসি হিসেবে। আর বাবা আবদুল ওয়াদদু মিয়াও চাকরি করেছেন পুলিশে।
ঢাকা জার্নাল, জুস ২৫, ২০১৬।