আন্তর্জাতিক

আফ্রিকাকে নিয়ে চীন ও ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

logo-1000x748ঢাকা জার্নাল: চীন এবং ভারত, উভয়েই ব্রিক্স’এর সদস্য৷ অপরদিকে দু’টি দেশ কাঁচামাল ও তাদের নিজেদের পণ্যের জন্য উপযুক্ত বাজারের খোঁজে বিশ্বব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে৷ সেটা সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায় আফ্রিকায়৷

পরিসংখ্যান দেখলেই চক্ষু চড়কগাছ! চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্য মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে দেড়শো কোটি ডলার থেকে ছ’হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে৷ এছাড়া চীন দক্ষিণ আফ্রিকায় বিনিয়োগ করেছে প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার৷

আফ্রিকা মহাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকাই হল চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী৷ ঐ পথ ধরেই চীন আফ্রিকায় অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজছে, কেপটাউন থেকে কায়রো অবধি৷ গোটা আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ আজ দাঁড়িয়েছে দশ হাজার কোটি ডলারে৷ সেই সঙ্গে আছে পরিকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগ৷

আফ্রিকায় চীন কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, তার পরেই আছে ভারত৷ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ৩,৩০০ কোটি ডলার; ২০১৫ সালের মধ্যে তা নাকি বেড়ে ৯,০০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে৷

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন গতবছর ‘‘আফ্রিকা-ভারত সম্পর্কে একটি নতুন যুগ” শুরু হওয়ার কথা বলেন, তখন তিনি সেই সঙ্গে চীনকেও একটি খোঁচা দিতে ছাড়েননি৷ সিং বলেন, ভারত স্থানীয় লোকজনদের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করবে – চীন ঠিক যার উল্টোটা করে থাকে, আফ্রিকায় নিজের শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করে৷

চীনের আফ্রিকা নীতির সমালোচনা ধীরে ধীরে আফ্রিকাতেও শ্রুতিগোচর হচ্ছে৷ মার্চের সূচনায় নাইজিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যংকের প্রধান লামিদো সানুসি ‘‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস” পত্রিকাকে বলেন, আফ্রিকায় উৎপাদন শিল্পের অন্তর্ধান এবং অনুন্নত অবস্থার জন্য চীনও অনেকাংশে দায়ী৷

‘‘ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের মর্মই ছিল তাই৷ বর্তমানে আফ্রিকা স্বেচ্ছায় এক নতুন ধরনের সাম্রাজ্যবাদকে সুযোগ করে দিচ্ছে,” বলেছেন সানুসি৷ কাজেই চীনের সঙ্গে আফ্রিকার ‘‘রোম্যান্সের” পরিবর্তে আফ্রিকার এখন ‘‘অর্থনৈতিক কড়া-গণ্ডা” বিচার করে দেখা উচিৎ৷

দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতিবিদরা চীনের সঙ্গে একটি অস্বাস্থ্যকর ব্যালান্স অফ ট্রেড বা বাণিজ্যিক ভারসাম্যের কথা বলছেন৷ চীন নাকি আফ্রিকা থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে নিয়ে গিয়ে, চীনে তা পণ্যে রূপান্তরিত করে, সেই পণ্য আবার আফ্রিকায় বিক্রয় করে৷

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা ডার্বানে ব্রিক্স দেশগুলির সম্মেলন শুরু হবার আগেই চীনের নতুন প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং’কে স্বাগত জানাবেন৷ শি যে তাঁর প্রথম বৈদেশিক সফরের জন্য ব্রিক্স সম্মেলন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেছে নিয়েছেন, তার কারণ হল আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেস এবং চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে বহুকালের সম্পর্ক, বিশেষ করে জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধে এএনসি’র সুদীর্ঘ লড়াই’তে৷

অপরদিকে চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক মাত্র ১৫ বছর যাবৎ৷ সেক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুদিন কাটিয়েছিলেন৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা কম নয় এবং ভারতীয় সংস্কৃতির নিদর্শন সর্বত্র৷

তবে অর্থনীতির ‘‘কড়ায়-গণ্ডায়” এ’সবের মূল্য কতোটা, কে বলতে পারবে?

সূত্র: ডিডব্লিউ

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.