শীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

আফগানফেরত যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে জঙ্গিসংগঠনগুলো!

9যুদ্ধক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগানফেরত বাংলাদেশি মুজাহিদরাই গোপনে জঙ্গি কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। তারাই মূলত এদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। আফগানফেরত এসব যোদ্ধাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জামায়াত-শিবিরের এক শ্রেণির উগ্রবাদী গোষ্ঠী নেপথ্যে থেকে নানাভাবে তাদের সহায়তা দিচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছে। সম্প্রতি তাদের একটি অংশ প্রকাশ্যে এসেছে। জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি যখন প্রায় বন্ধ, তখন আফগানফেরত এসব যোদ্ধা ইসলামের নামে ধর্মভীরু মানুষের ভেতর ছড়িয়ে দিচ্ছে ‘জঙ্গি’মনোভাব। তবে জঙ্গিদের আগের মতো জানান দেওয়ার সুযোগ নেই বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনগুলোর আগের সেই শক্তিমত্তা নেই। মাঝে-মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। আফগানফেরত কিছু কথিত মুজাহিদ এসব জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেপথ্যে কাজ করছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে পাকিস্তান হয়ে যারা আফগানিস্তানে তালেবানের পক্ষ হয়ে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদেরই একটি অংশ পাকিস্তান-আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথম জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলে। আফগানফেরত এসব যোদ্ধার বড় একটি অংশ বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের উত্থানে কাজ করছে। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, তেহরিক-ই তালেবান, কাশ্মীরি মুজাহিদ এবং আরাকানের রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৮০ দশকের দিকে আফগানিস্তানের রণাঙ্গনে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) জন্ম হয়। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত যোদ্ধা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পরে এসব যোদ্ধা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশিদের আফগান যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে থাকে। ওই সময় তারা আফগানযুদ্ধ বন্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে, মিছিল-সমাবেশ করে। পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখে এসব আফগানফেরত যোদ্ধা।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই তালেবান, তেহরি-ই-ইসলামী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি, লস্কর-ই তৈয়বার অর্থ সহযোগিতায় এসব যোদ্ধা ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি সময় কয়েকশ বাংলাদেশিকে আফগানযুদ্ধে পাঠাতে সক্ষম হয়। ওই সময় আফগানযুদ্ধে যাওয়া ছিল একটি বীরত্বের প্রতীক। আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেখান থেকে বাংলাদেশি মুজাহিদরা ফিরে এসে ১৯৯৩ সালে এদেশে হুজির কার্যক্রম শুরু করে

মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি আবদুর রউফ ও আবদুস সালামের নেতৃত্বে দেশে প্রথম জঙ্গি সংগঠন হুজি গঠন করা হয়। এ তিনজনই মূলত আফগানফেরত যোদ্ধাদের একত্রিত করে। ২০০১ সালের প্রথম দিকে মুফতি হান্নানের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় মুফতি আবদুস সালাম সংগঠনের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় মুফতি আবদুল হান্নানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর ফলে আফগানফেরত অনেক যোদ্ধা ওই সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করে। এত কিছুর পর সে সময় পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই ব্যাপারে একটি প্রতিবেদনও দেয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় সাত হাজার এনজিওকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এনজিওগুলোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা আসে বাংলাদেশে। এসব টাকা জঙ্গি তৎপরতার কাজে ব্যয় করা হয় বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.