শীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য অবসান হচ্ছে

Govঢাকা জার্প্রনাল : শাসনে দীর্ঘদিনের আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর হতে যাচ্ছে। সব ক্যাডারের প্রধান পদগুলো সচিব পদমর্যাদায় (গ্রেড-১) উন্নীত করা হচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের মতো অন্য সব ক্যাডারের প্রধান পদগুলোকে সচিবের মর্যাদা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে প্রধান করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে দীর্ঘদিনের আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের অবসান হবে। এতে প্রশাসন ও পুলিশ ছাড়া অন্য সব ক্যাডারের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রশমিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

প্রশাসনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দীর্ঘদিনের। প্রশাসন ছাড়া শিক্ষা, প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসহ ২৬ ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের পদমর্যাদার উন্নতির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে শুধু আশ্বাসের পর আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্য সব ক্যাডারের দাবি বাস্তবায়ন না হতেই বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শীর্ষপদ সচিব থেকে সিনিয়র সচিব এবং অতিরিক্ত আইজিপি পদ সচিব (গ্রেড-১) মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। এ ঘটনায় অন্যান্য ক্যাডার (বিসিএস সমন্বয় পরিষদ) কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা দাবি করেন, প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের মতো অন্যান্য ক্যাডারকেও সমান সুযোগ দিতে হবে। সব ক্যাডারের প্রধান পদগুলো সচিব (গ্রেড-১) পদমর্যাদায় উন্নীত করতে হবে। এই দাবি জোরালো হওয়ায় মহাজোট সরকার মেয়াদ শেষে এসে নীতিনির্ধারক ২১ দফতর ও সংস্থার প্রধানদের পদমর্যাদা গ্রেড-১-এ (সচিব) উন্নীত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে প্রধান করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, অর্থ বিভাগের সচিব ফজলে কবির, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের মহাসচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিসিএস সমন্বয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি ডা. আবদুল মান্নান, এমএ তালেব, মহাসচিব ফিরোজ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুমে রব্বানী খান ও বিসিএস ইকোনমিক সমিতির মহাসচিব প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী। সদস্য সচিবের দায়িত্বে আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব।

প্রথম সভায় কমিটির কয়েকজন সদস্য বর্তমান বাস্তবতা, কাজের পরিধি ও জাতীয় উন্নয়নে অবদানসহ আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। সভায় যোগ্যতা ও মেধার মাপকাঠির নিরিখে সব দফতর ও সংস্থার প্রধানদের পদ গ্রেড-১-এ (সচিব) উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। সভায় বলা হয়, সংস্থার প্রধানদের সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করা হলে দাফতরিক কাজে গতি বৃদ্ধি পাবে।

দীর্ঘদিনের আন্তঃক্যাডার বৈষম্যেরও অবসান হবে। সভায় তথ্য অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, পরমাণু শক্তি কমিশন, ডাক অধিদফতর, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ ২১টি অধিদফতর ও সংস্থার প্রধানের পদকে গ্রেড-২ (অতিরিক্ত সচিব) থেকে গ্রেড-১-এ (সচিব) উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়।

সূত্র জানায়, কমিটির বৈঠকের পর এ সংক্রান্ত সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

এ বিষয়ে বিসিএস সমন্বয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সব ক্যাডারের গুরুত্ব সমান হওয়া উচিত। কোনো ক্যাডারকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকার এ বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে কাজ করছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এ বৈষম্য দূর করবেন।’

ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ২২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.