শিক্ষা-সংস্কৃতি

আদালতের আদেশও মানছে না আইডিয়ালের গভর্নিং বডি

শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে দুই সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করেনি রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি। শুধু তা-ই নয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশও মানা হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, গভর্নিং বডির শূন্য পদ পূরণের অমান্য করেছেন অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। চেয়ারম্যানও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ জাহিদুল ইসলাম টিপুর আকস্মিক মৃত্যতে গভর্নিং বডির মাধ্যমিক শাখার নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য পদটি শূন্য হয়ে যায়। তার মৃত্যুর পর বিধি অনুযায়ী নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার মো. আনিছুর রহমান সদস্য পদে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রথমে গভর্নিং বডির চোয়ারম্যান বা সভাপতি বরাবর আবেদন করেন ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ। কিন্তু গভর্নিং বডি কোনও ব্যবস্থা না নিলে ওই বছরের ২৬ এপ্রিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন।

একইভাবে গভর্নিং বডির উচ্চমাধ্যমিক শাখায় নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য সোহেল আহমেদ সিদ্দিকীর মৃত্যু হয় ২০২২ সালের ৮ মে। তার মৃত্যুর পর বিধি অনুযায়ী শূন্য গভর্নিং বডির উচ্চমাধ্যমিক শাখার শূন্য পদে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রথমে গভর্নিং বডির সভাপতি এবং ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন মো. সাইফুজ্জামান।

দুই সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুতে দুটি পদ শূন্য হওয়ার পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) গঠন-সংক্রান্ত ২০০৯ সালের প্রবিধানমালার ৩১ অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ১ অনুযায়ী গভর্নিং বডির দুটি শূন্য পদ পূরণের ব্যবস্থা নিতে ২০২২ সালের ১২ জুন নির্দেশনা দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের নির্দেশের পর আনিছুর রহমান আবার গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর সদস্য পদে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেন ২০২২ সালের ৫ জুন।

এরপর ২০২২ সালের ১১ আগস্ট গভর্নিং বডির দুই শূন্য পদে দুজনকে অন্তর্ভুক্তিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড অধ্যক্ষকে নির্দেশনা দেয়। এতে বলা হয়, ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডিতে আকস্মিক মৃত্যুজনিত কারণে অভিভাবক প্রতিনিধির দুটি পদ শূন্য হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বোর্ড থেকে মনোনয়ন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। জাহিদুল ইসলাম টিপুর মৃত্যতে আকস্মিক পদ শূন্য হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (গভর্নিং বডি ও ম্যনেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৩১ অনুচ্ছেদ ৩১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (১)-এর নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী অধিক সংখ্যক ভোট পাওয়ায় মো. আনিছুর রহমান (ব্যালট নং ০৯) এবং মো. সাইফুজ্জামানকে প্রতিনিধি পদে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। একইভাবে গভর্নিং বডির উচ্চমাধ্যমিক শাখায় নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য সোহেল আহমেদ সিদ্দিকীকে গভর্নিং বডির সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু আজ অবধি গভর্নিং বডির সদস্য পদে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। একের পর এক গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এই দুটি সদস্য পদ ফাঁকা রেখেই।

শিক্ষা বোর্ডের এই নির্দেশনা অমান্য করায় ভুক্তভোগী মো. আনিছুর রহমান ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। রিটের শানানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই বছর ১২ ডিসেম্বর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (গভর্নিং বডি ও ম্যনেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৩১ অনুচ্ছেদ ৩১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (১) অনুযায়ী চার সপ্তাহের রুল জারি করেন এবং সদস্য পদে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দেন। আদেশে অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানকে আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে গভর্নিং বডির সদস্যের শূন্য পদে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়। হাইকোর্টের এই আদেশের ছয় মাস পারও হয়ে গেলেও সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করেননি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি এবং সদস্য সচিব অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। সভাপতিও কোনও পদক্ষেপ নেননি।

ভুক্তভোগী মো. আনিছুর রহমান  বলেন, ‘গভর্নিং বডির সভাপতি এবং সদস্য সচিব কেউ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করছেন না। তারা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনমান্য করায় আমি হাইকোর্ট রিট করি। রিটে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দিলেও তারা তাতেও পাত্তা দিচ্ছেন না তারা। তা ছাড়া বর্তমান গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আমি গভর্নিং বডি ভেঙে দিতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আজ (৬ জুন) লিখিত আবেদন করেছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, নিয়োগসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও ভর্তি-বাণিজ্যের সুবিধা নিতে দুই সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা সদস্য পদে অন্তর্ভক্ত করতে যা করার করেছিলাম। গভর্নিং বডি না মানায় আদালতে মামলা হয়েছে। মামলা শেষ না হওয়ার কারণে আমরাও এখন নতুন করে কিছু করতে পারছি না। তবে গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে নতুন করে যে অভিযোগ এসেছে, তার তদন্তে কমিটি গঠন করবো। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পেলে কমিটি ভেঙে দেবো।’

এ বিষয়টি জানতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীর সঙ্গে মঙ্গলবার (৬ জুন) একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা এবং আদালতের আদেশ না মানার বিষয়টি তুলে ধরে হোয়াটঅ্যাপে ম্যাসেজ দেওয়া হলেও তিনি কোনও জবাব দেননি।

জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হেনা মোর্শেদ জামান  বলেন, ‘মেটার সাবজুডিস। নো কমেন্টস। বিষয়টি তো আদালতে বিচারাধীন, আদালতের চূড়ান্ত রায় আসুক।’