আজ শহীদ রাজু দিবস
ঢাকা জার্নাল: আজ ১৩ মার্চ রাজু দিবস। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বিরোধী দিবস। সন্ত্রাসীদের বিরোধীতা করায় এ দিনে রাজুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসেন রাজু গর্জে উঠে। তাৎক্ষনিক সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সঙ্ঘবদ্ধ করে প্রতিবাদ জানায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের। ছাত্রলীগ ছাত্রদলের বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এই মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিতে রাজু মারা যায়।
রাজুর মা খাদিজা বেগম বলেন, “আমার জীবনের যত সাধনা, আকাঙ্খা ফানুসের মত চুপসে গেল শুধু মাত্র একটি টেলিফোনে । তখনও ভাবতে পারিনি আমার রাজু মারা গেছে! সৃষ্টিকর্তার কাছে ওর প্রাণ ভিক্ষে চাইতে চাইতে ছুটে গেছি মেডিকেলে। দেখতে দিল না আমকে। বাবু (বড় ছেলে) কাঁদছে আমাকে জড়িয়ে ধরে_রাজুর বন্ধুরাও কাঁদছে। ওরা আমাকে বাসায় চলে যেতে বলছে। ডাক্তার নাকি সুস্থ করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। রাজু একটু সুস্থ হলেই বাসায় নিয়ে আসবে ওরা। তখনও বুঝতে পারিনি তপ্ত বুলেট ওর মাথা ভেদ করে কপাল দিয়ে বেরিয়ে গেছে।”
মঈন হোসেন রাজু’র জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ জুলাই। বরিশালের মেহেদীগঞ্জে। তবে রাজুর পরিবার প্রথমে চিটাগং ও পরে ঢাকাতে বসবাস শুরু করে। বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন। মা খাদিজা বেগম। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর প্রাইমারী ও হাইস্কুল। ১৯৮৭ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে।
ঢাকাতে বসবাস করার সময়ে রাজু যুক্ত হন লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। যুক্ত হয়ে প্রথমে শেরে বাংলা নগরে ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন। এরপর তেজগাঁও কলেজে গড়ে তোলেন ছাত্র ইউনিয়নের দূর্গ। ফলে তিনি তেজগাঁও থাকা কমিটির অন্যতম নেতা হয়ে ঊঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাথে।
এ সময় তিনি ৯০’র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত থাকার সময় প্রথমে তিনি শহীদুল্লাহ হল কমিটির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং ওই বছর ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৯১)।
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভীত-সন্ত্রস হয়ে পড়ে। সন্ত্রাস রুখে দাড়াতে ছাত্র ইউনিয়ন তার তখনকার যুক্ত মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেই মিছিলে ছাত্রদল গুলি করলে তা রাজুর শরীরে লাগে।
রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ.কে. আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নিমার্ণে জড়িত শিল্পীরা হলেন ভাস্বর শ্যামল চৌধুরী ও তার সহযোগী গোপাল পাল।
নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি, লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল।
ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।