‘আঙ্কেল, জাফর ইকবাল কোনদিকে’
ঢাকা জার্নাল : স্টলে ঢুকেই জিজ্ঞাসা, ‘আঙ্কেল, জাফর ইকবাল কোনদিকে?’। চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমা, সঙ্গে তিন সহপাঠী, স্কুলের পোশাক পরা কিশোর-কিশোরী।
যাকে সম্বোধন, তিনিও খুব স্বাভাবিকভাবে আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন, ‘এইদিকে’। বলার অভ্যস্ত ভঙ্গি বলে দেয়, তিনি এমন প্রশ্নের উত্তর আগে আরও অনেকবার দিয়েছেন।
সপ্তাহজুড়ে এমন চিত্রের দেখা মেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বলাই বাহুল্য, ‘জাফর ইকবাল কোনদিকে’ বলতে লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বইয়ের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
কাকলী প্রকাশনীর স্টলে বসা এক বিক্রেতা জানালেন, এ দু’দিনে অসংখ্যবার এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। জাফর ইকবাল স্যারের নতুন বই নিয়ে আগ্রহ ছেলেমেয়েদের। পুরনো বইও বিক্রি হচ্ছে।
তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে আসা মুহম্মদ জাফর ইকবালের নতুন বই ‘ক্রেনিয়াল’।
নবম শ্রেণীর ছাত্রী নিম্মী ফাইজা তার বন্ধুদের পড়ে শোনাচ্ছিলেন সায়েন্স ফিকশন ‘ক্রেনিয়াল’র চুম্বকাংশ।
‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার যুগে মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে আত্মঘাতী নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণে। বেঁচে আছে অল্পসংখ্যক মানুষ। সেই ধ্বংসস্তপে তাদের হাত ধরেই শুরু হলো সভ্যতার নতুন পথচলা।
প্রাচীর ঘেরা শহরে শহরে গড়ে উঠলো যন্ত্রসর্বস্ব অমানবিক জীবনধারা। সেখানে জ্ঞানেবিজ্ঞানে পারদর্শী করে তোলার জন্য মানুষের মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হয় ক্রেনিয়াল।
কিন্তু সে কেবলই বাধ্য ও অনুগতদের জন্য। যদি কেউ প্রশ্ন করে বসে, তার কিন্তু রেহাই নেই, ডিটিউন করে তার মস্তিস্ককে অচল করে দেওয়া হয়।
মস্তিষ্কবিহীন যন্ত্রচালিত এই পৃথিবীতে অবাধ্যতার ঢেউ তুলে এগিয়ে টিশা আর রিহি নামে কিশোরী-কিশোর। ধুধু মরু প্রান্তরে শুরু হলো তাদের বিপজ্জনক অভিযাত্রা।’ তাদের রুদ্ধশ্বাস উপাখ্যান ‘ক্রেনিয়াল’। এ বৈজ্ঞানিক কল্পকথা এখন নিম্মীর ব্যাগে।
তার লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘তিতুনি এবং তিতুনি’ এনেছে কাকলী প্রকাশনী। ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড থেকে বই মেলায় এসেছে সারাহ কামাল। বইটা উল্টেপাল্টে দেখে সময় নষ্ট না করে কিনে নেয় সে।
জাফর ইকবালের আরেকটি বই ‘যখনই জাগিবে তুমি’। ২০০ পাতার বইটি নিয়েও আগ্রহ রয়েছে অনেকের। এক্ষেত্রে অবশ্য বড়দের আগ্রহই বেশি।
এবারের মেলায় নতুন বই প্রসঙ্গে লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, তার এ মেলায় নতুন বই বের হচ্ছে- ‘চারবন্ধু’ পার্ল থেকে, চন্দ্রদীপ থেকে ‘ইঁদুর এবং দুষ্টু হাতি’, পাললিক থেকে ‘মুশি হলো খুশি’, ‘যখন জাগিবে তুমি’ আফসার থেকে, ‘স-তে সেন্টু’ সময় থেকে, কলামসমগ্র (তিন) অনন্যা থেকে, ইংরেজীতে অনূদিত ‘ফোর ফ্রেন্ডস’ পার্ল থেকে ও ভৌতিক কাহিনীর ‘অন্য জীবন’ অনুপম থেকে।
এর মধ্যে কিছু বই ইতিমধ্যে মেলায় চলে এলেও বাকিগুলো মেলার মাঝামাঝি সময়ে আসবে বলে জানান তার এক ঘনিষ্ঠজন। এবার মেলায় নতুন পুরনো মিলিয়ে প্রকাশনীগুলোতে তার প্রায় ১৮০টি বই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শুধু নতুন বই নয়, জাফর ইকবালের পুরনো বইগুলোরও বিক্রি ভালো বলে জানালেন প্রকাশকরা।
বাপ্পার বন্ধু, গ্রামের নাম কাঁকনডুবি, পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ, ইস্টিশন, রাশা, শুকনো ফুল রঙিন ফুল, কেপলার টুটুবি, যারা বায়োবট, অবনীল, জলজ, এক টুকরো লাল সবুজ কাপড়, নিউরনে অনুরণন, নিউরনে আবারো অনুরণন, গনিতের মজা মজার গণিত- এ বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাম্রলিপিতে।
শুধু জাফর ইকবালের বই নিয়ে আগ্রহ নয়, তাকে কোনদিন মেলায় দেখা যাবে- সে প্রশ্নের উত্তরও দিতে হচ্ছে প্রকাশক ও স্টলকর্মীদের। যদিও নিশ্চিতভাবে কোনো দিনক্ষণ জানাতে পারছেন না তারা। তবু কৌশলে বলছেন, যেকোনো শুক্র বা শনিবার স্যার মেলায় আসবেন। কারণ তিনি শিশুদের পছন্দ করেন। শিশুপ্রহরেই তার আসার সম্ভাবনা বেশি। রিপোর্ট সাজেদা সুইটি, বাংলানিউজ।
ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬