Lead

আগামী গ্রীষ্মে লোডশেডিং হবে না: বিদ্যুৎ বিভাগ

আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কয়লাভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সহসাই উৎপাদনে আসার কথা উল্লেখ করে বিদ্যুত বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রোববার (২০ নভেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে বিদ্যুতের লোডশেডিং কমাতে সরকারের ‍পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রামের বাশখালীর এসএস পাওয়ার ওয়ান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে আসার বিষয়টি জানান। এর মধ্যে কোনও কোনও কেন্দ্র অনানুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনও শুরু করেছে বলে জানানো হয়। এ সময় তিনি সম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে লোডশেডিংয়ের সমস্যা থাকবে না। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমেও লোডশেডিং হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আমাদের জানিয়েছেন। শীত মৌসুমে কোনও লোডশেডিং থাকবে না। উৎপাদনের অপেক্ষায় থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং থাকবে না বলে সচিব জানিয়েছেন।’

কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তুত হলেও সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি নেই, এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কি সম্ভব হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এই বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তারা জানিয়েছেম, বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজের সমানতালে সঞ্চালন লাইনের কাজও চলমান আছে। আমরা তাদেরকে সমন্বয় করে কাজ শেষ করতে বলেছি। সঞ্চালন লাইনের কাজের গতি বাড়াতে বলেছি, যাতে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর কোন কেন্দ্রকে বসে থাকতে না হয়।’

বৈশ্বিক সংকটের কারণে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দেয়। তবে, শীত মৌসুম চলে আসায় চাহিদা কমার প্রেক্ষাপটে লোডশেডিং অনেকটাই কমে গেছে। ডিসেম্বরে বিদ্যুতের কস্ট কেটে যাবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে বৈঠকে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে দেখা গেছে, সারা দেশে বিদ্যুতের বিদ্যুতের গ্রাহক হবে ৪ কোটি ৩৭ লাখ গ্রাহকের মধ্যে অক্টোবর ২২ পর্যন্ত ৬টি বিতরণ কোম্পানি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে। মোট গ্রাহকের তুলনায় প্রি-পেইড ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। ৬টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে বাবিউবো প্রি-ডেইড গ্রাহক ১৫ লাখ ৯০ হাজার ২৫৬টি, বিআরইবি ১৩ লাখ ১০ হাজার ৫৬৪টি, ডিপিডিসি ৬ লাখ ৫১ হাজার ৪২১টি, ডেসকো ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৬০টি, ওজোপাডিকো ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৮টি এবং নেসকো ৫ লাখ।

ঢাকা মহানগরীতে প্রি-পেইড স্থাপনে ধীরগতির বিষয়ে সচিব জানান, ডিপিডিসি ও ডেসকো কনসাল্টিং ফার্ম সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ৬-৭ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রি-পেইড স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বৃহত্তর ঢাকা এলাকা সম্পূর্ণ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। চলতি অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট মিটার পর্যায়ক্রমে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারে রূপান্তর করা হবে।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ১০৬ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এ সময় আইইবি ৯৫৯ কোটি ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৬২৩ টাকা আয় করেছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন ব্যয়, ঋণের সুদ, আয়কর প্রদানের পর এই নিট লাভ করেছে। কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য আবু জাহির, আলী আজগার, নূরুল ইসলাম তালুকদার, খালেদা খানম এবং নার্গিস রহমান অংশগ্রহণ করেন।