আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ২

মে ২৯, ২০২৪

ঢাকা জার্নাল ডেস্ক: 

নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হাসানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সঙ্গে থাকা দুই কর্মী। 

মাহাবুবুল হাসানের বাড়ি ভগীরথপুর এলাকায়। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন নিহত মাহাবুবুল হাসানের কর্মী সাঈদ হাসান (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৩৭)। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য মেহেরপাড়ার বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিতকে (প্রান্ত) দায়ী করছেন নিহত ব্যক্তির কর্মী-সমর্থকরা।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে মাধবদী থানার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগিরথপুর এলাকায় এ ঘটনা হয়। নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার রাতে ভগিরথপুর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ৮/১০ জন দলীয় নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মাহবুবুল হাসান। পথে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজহার অমিত প্রান্তের মালিকানাধীন ওবায়দুল্লাহ টেক্সটাইলের সামনে পৌঁছলে ৭/৮ জন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত মাহবুব হাসানসহ তার সাথে থাকা লোকজনের ওপর হামলা করে। এসময় গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাহবুব হাসান (৪০), সাঈদ হাসান পাপ্পু (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৪০) নামে তিনজন আহত হয়।

স্থানীরা আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুইজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতের স্বজন, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ জনপ্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক পূূর্ব বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্মী সমর্থক ও স্বজনেরা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক দাবি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী রবিন মিয়া জানান, দলীয় কার্যালয় থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানসহ তারা বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় সামনে থাকা বালু ট্রাকের আড়াল হতে ৭/৮ জন অস্ত্রধারী চিহ্নিত দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাহবুবকে কোপাতে থাকে। এসময় সাথে থাকা লোকজন তাকে বাঁচাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বাঁধা হয়ে দাড়ানোর কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

নিহত মাহবুবুল হাসানের ছোট ভাই হাফেজ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলেন, আমার ভাই সাধারণ জনগণের কল্যাণে জন্য রাজনীতি করতো। মাদক ব্যবসা, অন্যায় অত্যচারের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদী ছিলেন। এসব কারণে খারাপ লোকজন কোণঠাসা থাকতো।  সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার ভাই যে পক্ষে কাজ করেছে তারা বিজয়ী হয়েছে। এ হিংসার জেরে পরাজিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মাহমুদুল কবীর বাশার বলেন, রাত পৌনে ১টার দিকে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহবুবুল হাসানসহ তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। মাহবুব হাসানের মাথার পেছনে ঘাড়ে বড় ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলির বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এসময় সাঈদ হাসান পাপ্পু ও ফরহাদ মিয়া নামে আরও দুইজনকে আহতাবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ সদর হাসপাতালে গিয়ে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ঘটনাটি মাধবদী থানার হওয়ায় তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা জানাবেন বলে জানান। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান হত্যার পর পুলিশ ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।