Lead

আইজি প্রিজন-আইন উপদেষ্টা বৈঠক, কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তা

196-564x330ঢাকা জার্নাল: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছার পর কারামহাপরিদর্শক এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এ সময় সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মোসতাকও উপস্থিত ছিলেন।

কারামহাপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন খন্দকার জানান, বৈঠকে রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সচিবালয়ে সোমবার দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কারামহাপরিদর্শক বৈঠক করেন।

রবিবার ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছার পর থেকেই ওই এলাকায়  বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়।

সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় কমপক্ষে ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে কারা ফটকে মোতায়েন করা হয়। এর আগে সাধারণ দিনের চেয়ে কারাগারের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত কারারক্ষী মোতায়েন করে কারা কর্তৃপক্ষ।

প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কারামহাপরির্শক মাঈন উদ্দিন খন্দকার বলেন, “রায় কার্যকরের বিষয় নিয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। কাদের মোল্লার প্রাণভিক্ষার বিষয়টি নিয়েও কথা হয় বৈঠকে।”

এদিকে রিভিউ আবেদন এবং প্রাণভিক্ষা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছে কাদের মোল্লার আইনজীবীরা।

তবে দুপুরে দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, “যে কোন সময় রায় কার্যকর হবে। রিভিউ আবেদনের সুযোগ নেই।

এর আগে রোববার আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, রিভিউ আবেদনের সুযোগ নেই বিশেষ এই ট্রাইবুন্যাল আইনে । তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন কাদের মোল্লা।

কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তা

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ দিনে কারা ফটকে ২ জন অস্ত্রধারী কারারক্ষী থাকলেও সোমবার সেখানে ৬ জন কারারক্ষীকে মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা ৮টার দিকে কারা ফটক থেকে ছবি তুলেছেন রাশিদুল আলম

সোমবার সন্ধ্যা ৮টার দিকে কারা ফটক থেকে ছবি তুলেছেন রাশিদুল আলম

এছাড়াও কারাগারের চারপাশে অতিরিক্ত কারারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।

সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারাগারের আশপাশে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানায় কারা সূত্রটি।

তবে লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হারুন উর রশিদ এটিএন টাইমসকে বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, হরতাল-অবরোধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এজন্য কারা ফটকেও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান হারুন উর রশিদ।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে একটি বাসভর্তি দাঙ্গা পুলিশ কারাগারের সামনে এসে পৌঁছায়।

উৎসুক জনতাকে কারা ফটকের সামনে দাঁড়াতে দিচ্ছে না কারারক্ষীরা।

এদিকে রাত ৯টার পর এটিএন টাইমস এর প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় জেলখানা এলাকার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, ফাঁসির মঞ্চে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সর্বশেষ রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে কারা ফটকে আসে র‌্যাব-১০ এর দুটি গাড়ি।

র‌্যাব-১০ কর্মকর্তারা জানান, এটি তাদের নিয়মিত কাজ। বিশেষ কোন কারণ নেই।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার এলাকায় কিছু দোকানপাট খোলা ছিল। সেখানে গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মীরপুরের এ জল্লাদকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের পর তিনি ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে যান।

তারপরই ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশ ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে, যার ঐতিহাসিক সূচনা হয় শাহবাগের গণজাগরন মঞ্চ দিয়ে।

এরপর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকার জাতীয় সংসদে  আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন করে আপিলের জন্য বাদী-বিবাদী উভয়ের জন্য সমান সুযোগ রাখে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেয়া যাবজ্জীবন সাজার পরিবর্তে যুদ্ধাপরাধে যুক্ত জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আপিল বিভাগ।

কাদের মোল্লাকে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার রাতে কারা ফটক থেকে ছবি তুলেছেন রাশিদুল আলম।

সোমবার রাতে কারা ফটক থেকে ছবি তুলেছেন রাশিদুল আলম।

মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত ৯ মামলায় ১০ জনকে সাজা দিয়েছে  ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে আট জনের মৃত্যুদণ্ড ও দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন পলাতক আছেন।

ট্রাইব্যুনাল-১ তিনজন ও ট্রাইব্যুনাল-২ সাতজনকে দণ্ড দেয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আট নেতা ও বিএনপির দুই নেতা রয়েছে।

গত ১৫ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এ রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকে একটি অপরাধী সংগঠন হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

এ রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, দালিলিক প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধী সংগঠনের মতো কাজ করেছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।

এছাড়া আরও কয়েকটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল ও পাকিস্তানি সেনাদের  সহযোগী বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ৯, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.