অল্পের জন্য জয়বঞ্চিত টাইগাররা
ঢাকা জার্নাল : সুপার টেনের হাইভোল্টেজ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে খুব সহজেই জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৩ উইকেটের জয় পায় অজিরা। ব্যাট হাতে এ ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করেন সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর বল হাতেও জ্বলে উঠেন সাকিব, মুস্তাফিজ।
টাইগারদের ইনফর্ম ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়াই খেলতে নামে বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫৭ রান সংগ্রহ করে লাল-সবুজরা। জবাবে, ১৮.৩ ওভার ব্যাট করে মাত্র তিনটি উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ৭ উইকেট হারানো স্টিভেন স্মিথের দল।
গ্রুপ ‘টু’ এর এই ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন অজি দলপতি স্টিভেন স্মিথ। টাইগারদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। তবে, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শেন ওয়াটসনের বলে বিদায় নেন সৌম্য। স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পয়েন্টে হাঁকাতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা পড়ার আগে সৌম্য ৬ বলে মাত্র ১ রান করেন।
দলীয় দুই রানের মাথায় টাইগারদের বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার ফিরে গেলে উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাব্বির রহমান ও মিঠুন। স্কোরবোর্ডে আরও ২৩ রান যোগ করে শেন ওয়াটসনের বলে ফকনারের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন সাব্বির। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আউট হওয়ার আগে সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে দুই চারে ১২ রান।
পাওয়ার প্লে থেকে টাইগারদের আসে দুই উইকেট হারিয়ে ৩৩ রান।
দলীয় ২৫ রানের মাথায় সৌম্য সরকার আর সাব্বির রহমান বিদায় নেওয়ার পর রানের চাকা ঘোরান সাকিব আল হাসান এবং ওপেনার মিঠুন। এ দুই টাইগার আরও ৩৭ রান যোগ করেন। ইনিংসের দশম ওভারে জামপা ফেরান মিঠুনকে। ওয়াটসনের তালুবন্দি হওয়ার আগে মিঠুন ২২ বলে একটি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করেন।
সৌম্য, সাব্বির আর মিঠুনের পর ১০ বলে ১৩ রান করে জামপার বলে এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন শুভাগত হোম। দলীয় ৭৮ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়।
ইনিংসের ১৬তম ওভারে জামপার বলে কোল্টার-নাইলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। আউট হওয়ার আগে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ২৫ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় করেন ৩৩ রান।
দলীয় ১০৫ রানে টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে স্কোরবোর্ডে লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে হাত খুলে খেলতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এই দুই টাইগার ২৮ বলে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে ভালো সংগ্রহ পাইয়ে দেন। রিয়াদ ২৯ বলে ৭টি চার আর একটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৪৯ রান। আর মুশফিক ১১ বলে দুটি চারের সাহায্যে করেন অপরাজিত ১৫ রান।
বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় মাঠে নামে দুই দল। বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানির জায়গায় দলে আসেন সাকলাইন সজীব ও শুভাগত হোম। তামিম অসুস্থ থাকায় খেলছেন না এই ম্যাচে। তার জায়গায় দলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে প্রথমবারের মতো আসেন মুস্তাফিজুর রহমান।
অজিদের হয়ে ওপেন করতে নামেন উসমান খাজা ও শেন ওয়াটসন। ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। ১৫ বলে দুটি চার আর একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ২১ রান করা ওয়াটসন বিদায় নেন। রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে মুস্তাফিজের মায়াবী কাটারে একবার জীবন ফিরে পান ওয়াটসন।
ইনিংসের ১২তম ওভারে অজি দলপতি স্টিভেন স্মিথকে সরাসরি বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। অজি অধিনায়ক দুই পা এক করেও নিজের স্টাম্প রক্ষা করতে পারেননি। আউট হওয়ার আগে স্মিথ এক ছক্কায় ১৩ বলে ১৪ রান করেন।
ওয়াটসন-স্মিথ ফিরে গেলেও আরেক ওপেনার উসমান খাজা অর্ধশতক হাঁকিয়ে ব্যাট করতে থাকেন। তবে, ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম বলেই উসমান খাজাকে বোল্ড করেন আল আমিন। ৪৫ বলে ৭টি চার আর একটি ছক্কায় অজি এই ব্যাটসম্যান করেন ৫৮ রান।
১৫তম ওভারে সাবিক ফিরিয়ে দেন ব্যাটে ঝড় তোলার ইঙ্গিত দেওয়া ডেভিড ওয়ার্নারকে। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন সাকিব। ওয়ার্নার ৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় করেন ১৭ রান।
১৭তম ওভারে মুস্তাফিজ তার দারুণ স্লোয়ারে ফিরিয়ে দেন ৬ বলে ৬ রান করা মিচেল মার্শকে। সাকিবের হাতে ধরা পড়েন মার্শ।
১৮তম ওভার সাকিব ফেরান ১৫ বলে ২৬ রান করা ম্যাক্সওয়েলকে। দুটি করে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। একই ওভারে হ্যাস্টিংসকেও ফেরান সাকিব।
৯ বল বাকি থাকতে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। টাইগারদের হয়ে ২ ওভারে ১৪ রান দিয়ে একটি উইকেট পান আল আমিন। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩০ রান খরচায় নেন দুটি উইকেট। আর সাকিব বল হাতে ৪ ওভারে ২৭ রান খরচ করে তিনটি উইকেট দখল করেন।
আগামী ২৩ মার্চ বেঙ্গালুরুর এই মাঠেই স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বুধবার সুপার টেনে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় মাঠে নামবে টাইগাররা
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, আল-আমিন হোসেন, শুভাগত হোম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, ও সাকলাইন সজীব।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ: স্টিভেন স্মিথ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, নাথান কোল্টার-নাইল, জেমস ফকনার, জন হ্যাস্টিংস, উসমান খাজা, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, পিটার নেভিল (উইকেটরক্ষক), শেন ওয়াটসন ও অ্যাডাম জাম্পা।
ঢাকা জার্নাল, ২১ মার্চ, ২০১৬