অমিতাভ-রেখার রসায়ন
ঢাকা জার্নাল: এখনো কী রোমান্টিক সম্পর্কের চাদরে বাঁধা অমিতাভ-রেখার সম্পর্ক! পর্দা আর পর্দার বাইরে অমিতাভ-রেখার সম্পর্কের বিষয়টি আজো সবার আগ্রহের বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে অমিতাভ-রেখার কিছু অন্তরঙ্গ
মুহূর্তের ছবি আবারো নতুন করে সেই প্রশ্নকে জাগিয়ে তুলছে। গতকাল ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বলিউডের অভিনেত্রী রেখার জন্মদিনে আবারো উঠে এসেছে বলিউডের জনপ্রিয় এ জুটির রহস্য-মধুর সে সম্পর্কের কথা। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে অমিতাভ-রেখার রহস্যের মায়া-অঞ্জনমাখা প্রেমের ইতিহাস। একই দিন সেই প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশিত হয়েছে ঢাকার শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনে।
সাক্ষাৎকারে রেখার সাহসী স্বীকারোক্তি
১৯৮৪ সালে একটি ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে রেখা বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে ভালোবাসি, তিনি আমাকে ভালোবাসেন।’ এটা চিরন্তন সত্য।
অমিতাভ-রেখার রহস্যের মায়া-অঞ্জনমাখা প্রেম এখনো বলিউডের বাতাসে গুঞ্জন তোলে। সম্প্রতি ‘ওয়েলকাম ব্যাক’ ছবিতে অমিতাভের বিপরীতে অভিনয় করতে রাজি হওয়ায় রেখা-অমিতাভের পুরোনো সেই সম্পর্কের কথা নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে।
সেই সাক্ষাত্কারে অমিতাভ প্রসঙ্গে রেখা আরো বলেছিলেন, ‘কেন আমরা সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়িনি? তিনি তাঁর সম্মান রক্ষায়, পরিবার, ছেলেমেয়ের কথা ভেবে দূরে সরে গেছেন। আমি মনে করি তিনি ভালো করেছেন। মানুষ তাঁকে নিয়ে কী ভাবল, আমার তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি তাঁকে ভালোবাসি কি না কিংবা তিনি আমাকে ভালোবাসেন কি না, তা জেনে মানুষ কী করবে?’
এখনকার অমিতাভ রেখারেখা বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রকাশ্য প্রেমের ঘোষণা নিয়ে কে কী ভাবল, তা নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। তিনি যদি আমার সঙ্গে গোপনে কোনো সম্পর্ক রাখতেন, তাহলে না হয় প্রশ্ন উঠতে পারত। কিন্তু তিনি এ রকম কী কখনও করেছেন? তাই জনসমক্ষে তিনি কী বললেন, তা নিয়ে আমার চিন্তার কিছু নেই। তিনি তো আর দশজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েননি। পুরোনো ধ্যান-ধারণার মানুষ হিসেবে তিনি কাউকে আঘাত দিতে চান না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে আঘাত দেবেন কেন?’
রেখা বলেছিলেন, ‘আমরা মানুষ, আমাদের সবকিছু নিয়েই চলতে হবে। আমাদের জীবনে দুঃখের চেয়ে সুখের পাল্লাটাও কম নয়। আর কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে চাই না। আমি যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে আছি, আমি আর কিছুর পরোয়া করি না।’
পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনেও বিভিন্ন সময়ে অমিতাভ-রেখা জুটির প্রেম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাঁদের রহস্যের চাদরে মোড়া এই প্রেমকাহিনির শুরু ধরতে গেলে সেই সত্তরের দশকে। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দো আনজানে’ ছবিতে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রেখা। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে রেখার প্রেমে পড়ে যান বিবাহিত অমিতাভ এবং দিনে দিনে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে এমন কথাই প্রচলিত আছে।
১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সিলসিলা’ ছবিতে অমিতাভ-রেখার রসায়ন দেখে বিমোহিত হয়ে যান দর্শকেরা। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এরপর আর কখনোই একসঙ্গে পর্দায় হাজির হননি অমিতাভ-রেখা।
জনসমক্ষে নিজেদের প্রেমের সম্পর্কটি কখনো স্বীকার না করলেও, একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন অমিতাভ-রেখা। এ জুটির ছবি মুক্তি পেলেই প্রেক্ষাগৃহে দর্শকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। বাস্তব জীবনে তাঁদের রহস্যময় প্রেমের কারণেও সম্ভবত দর্শকের ভেতর এ জুটিকে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল।
রেখা ও অমিতাভের পরিবারএকসময় অমিতাভের জন্য প্রকাশ্যে ভালোবাসার কথা বলা রেখার সঙ্গে এখনকার রেখার বিস্তর পার্থক্য। সময় গড়িয়েছে, অথচ রেখা-অমিতাভের পুরোনো সেই সম্পর্কের রহস্য আজও অমীমাংসিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কেউ যখন মুখ খুলেছেন, তখনই নতুন করে খবর হয়েছে তা।
সাম্প্রতিক একটি আলোকচিত্র অমিতাভ-রেখার সেই রহস্যময় প্রেম আর দুজনের সম্পর্ককে আবারও মানুষের মনে নতুন করে প্রশ্ন জাগিয়েছে। দুজন একই প্লেনে ভ্রমণ করছিলেন। ছবিটিতে প্লেনের পাইলট অমিতাভের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। ভক্তদের অনুরোধে এমন ছবি হরহামেশাই অমিতাভকে তুলতে হয়। কিন্তু এ ছবি আলোচিত হওয়ার একমাত্র কারণ সেই ছবিতে অমিতাভের ঠিক পেছনের সিটে বসে থাকা যাত্রীটি। ছবিতে অমিতাভের ঠিক পেছনেই দেখা গেছে রেখাকে!
অমিতাভ-রেখার কয়েকটি স্মরণীয় মুহূর্ত
অমিতাভ-রেখার সম্পর্কের এ রকম বেশ কিছু মুহূর্ত এর আগেও এসেছে, যা সবাইকে দ্বিধায় ফেলে দেওয়ার মতো। সম্প্রতি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের এক অনুষ্ঠানে অমিতাভ-রেখার সাক্ষাতের সময় দুজন দুজনকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তখন সবার মনেই প্রশ্ন উঠেছিল কেন তাঁরা কুশল বিনিময়টুকুও করেননি? আবার যখন দুজন একসঙ্গে হাসিমুখে ছবি তুললেন, তখন অন্তত ভক্তদের নিশ্চয়ই দ্বিধা ঘুচেছে যে, সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে।
রেখা, ঐশ্বরিয়া ও অমিতাভসাধারণত অমিতাভের স্ত্রী জয়া বচ্চনকে ‘দিদি’ বলেই সম্বোধন করেন রেখা আর পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে ডাকেন ‘বহু’ বলে। ২০০৯ সালের ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসেও বচ্চন পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখতে দেখা গেছে রেখাকে।
সর্বশেষ ‘ব্ল্যাক’ চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ারে অমিতাভ-রেখাকে একসঙ্গে হাস্যোজ্জ্বলভাবে ক্যামেরার সামনে দেখা গেছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় জুটির নাম বললে বোধ হয় মনে সবার আগে আসবে অমিতাভ-রেখার নাম। পর্দায় তাঁদের রসায়ন দেখে অভিভূত হয়েছেন অগণিত চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শক। বলিউডের পরিচালক আনিস বাজমি তাঁর ‘ওয়েলকাম ব্যাক’ ছবিতে এ জুটিকে আবার একসঙ্গে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মৌখিকভাবে রেখা অমিতাভের সঙ্গে ফিরে আসার জন্য সম্মতিও দিয়েছেন। এখন নিশ্চয়ই অগণিত ভক্তরা এ জুটির রসায়নকে আবারো পর্দায় দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।
ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ১১, ২০১৩।