‘অনুরাগ, নইলে কী সাধন হয়’
ঢাকা জার্নাল: ‘অনুরাগ, নইলে কী সাধন হয়’ সাধক লালন ফকিরের গানে মগ্ন হয়ে রেওয়াজ করছেন বাউল সম্রাট শফি মণ্ডল। রেওয়াজ শেষে জানালেন- অহিংসা ধর্মজ্ঞান, অমৃতে আসক্তি কম আর অল্পেই তুষ্ট আমি। সাধনায় সঙ্গীত, সাধনায় স্রষ্টা। এ দুইয়ের মধ্যেই কাটাচ্ছি।
শনিবার (১৮ জুন) দিনভর সংযমের মধ্যেও হোটেল বয় আর ম্যাসিয়ারদের সঙ্গে সঙ্গীত আড্ডায় কাটে এই বাউল শিল্পীর।
হোটেল বয় ও ম্যসিয়ারদের আনন্দ দেওয়া, তাদের গান শেখানো আর ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতি শনিবারেই শফি মণ্ডল যান রাজধানীর নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ডের কাছে মিলন আর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে।
প্রতি শনিবারের মতো ওই দিনটিও কাটে তাদের সঙ্গে। এরপর বাসায় ফিরেই সুফি সাধক লালনের গানে সঁপে দিয়েছেন নিজেকে। ক্লান্তিহীন রেওয়াজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইফতারের পর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাশে নিজ বাসায় একাই রেওয়াজ করে চলেছেন এই বাউল শিল্পী। ড্রয়িং রুমে সামান্য দূরে বসে গুরুর রেওয়াজ শুনছেন তিন ভক্ত। আর রান্নায় ব্যস্ত অপরজন।
লালন ফকিরের ‘অনুরাগ নইলে কী সাধন হয়’ গানের রেওয়াজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভক্তদের সঙ্গে আড্ডা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।
শফি মণ্ডল বলেন, সরাদিন হোটেল বয়, ম্যসিয়ার আর শিশুদের গান শুনিয়েছেন, শিখিয়েছেন। গরিব ম্যাসিয়ারদের আনন্দ দেওয়ার মধ্যেই প্রতি শনিবার নিজে আনন্দ খুঁজে পাই। সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে সঙ্গীতের মধ্যেই প্রার্থনায় নিজেকে সঁপে দিয়েছি ।
প্রসঙ্গ আসে রোজার। শফি মণ্ডল বলেন- গরিব-দুখী, শিশু, নারী সব মানুষই সমান। সংযমের সময় শুধু নয়। আমি ভক্তদের বলি অহিংসাই যেনো হয় সবার ধর্মজ্ঞান, অমৃত বা সুসাধু দ্রব্যে লালসা কম রাখাই বাঞ্ছনীয়। আমি নিজেও তা বিশ্বাস করি, অল্পেই তুষ্ট থাকি।
প্রতিদিনই কি রেওয়াজ করেন জানতে চাইলে শফি মণ্ডল বলেন, সাধনায় সঙ্গীত, সাধনায় স্রষ্টা। এ দুইয়ের মধ্যেই কাটাচ্ছি। কারণ সাধনা ছাড়া দুটোর কোনোটিই মেলে না।
হোটেল বয়দের পর আর কোনো উদ্যোগ সামনে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা খুবই সামান্য। সমাজে এসব শিশুরা অসহায় ও নিরানন্দ জীবন যাপন করে। তাদের পাশে প্রত্যেকরই দাঁড়ানো উচিত। এসব শিশুদের জীবনের সামান্য সময় আনন্দময় করে তোলার জন্য সেল্টার হোমগুলোতে গিয়ে গান করতে চাই। তাদের সঙ্গে কাটাতে চাই কিছু সময়।
শফি মণ্ডল মাঝে মধ্যে প্রকৃতির কাছে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে আনন্দ খোঁজেন। সময় পেলেই নির্জনে যান ভক্তদের সঙ্গে। কখনও গ্রামে অথবা নদীর ধারে। তবে সঙ্গীত সাধনার ব্যত্যয় ঘটে না সেখানেও। দু’একটি যন্ত্র রাখেন সব সময় কাছে। মন চাইলেই লালনের গানে মেতে উঠেন। সৌজন্যে বাংলা নিউজ।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১৯, ২০১৬।