৫০ শতাংশ নারী বেশি নির্যাতনের শিকার
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ নারী বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পরিবারের বাইরে। সাইবার প্লেসে গড়ে ৩৫০টির বেশি মামলা হয়ে থাকে নারী নির্যাতনের।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ঢাকা ডিভিশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন এর অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের উপপরিচালক হুমায়রা পারভীন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, উইমেন সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, যেখানে পারিবারিক ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। নারী নির্যাতন রোধে নারী পুলিশকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে প্রচলিত আইন, প্রসিডিংস, মামলার রায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চতর পদে নারীরা কর্মরত আছেন এবং সহিংসতা প্রতিরোধে তারা অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তা করলেও নারীর প্রতি সহিংসতা নারী আন্দোলন ও রাষ্ট্রপরিচালনা কারীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলনকে আরো ত্বরান্বিত করতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরও তৎপরতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ও গৃহীত নতুন আইনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে এবং আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান মালেকা বানু।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার জন্য সহনশশীল ও অনুভূতিশীলতার জায়গা থেকে কাজ করার লক্ষ্যে জেন্ডার জাস্টিস সিস্টেম উন্নত করতে উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পরস্পর সমন্বয় করে কাজ করলে তা অধিক কার্যকর ও প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠুভাবে আইনের প্রয়োগও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আইনি সহায়তা ও সেবাদানকারীদের কাজের ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার করে, উদাসীনতা ও দূর্নীতিমুক্ত থেকে নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে সহিংসতার শিকার নারীদের অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজন অনুসারে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তাদেরকে সেবা দিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ১ম ও ২য় কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১ম কর্ম অধিবেশনে সেক্স ও জেন্ডার ধারনা : পরিপ্রেক্ষিত নারীর মানবাধিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা।
নারীর অধিকার রক্ষায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্বলিত কতিপয় রায় বাস্তবায়ন বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাড. মাকছুদা আখতার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আইনজীবী দিপ্তী সিকদার।
২য় কর্ম অধিবেশনে সাইবার নিগ্রহ,নিপীড়ন, আইনী সুরক্ষা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা। আলোচনা শেষে নারী ও কন্যা নির্যাতনের মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও করনীয়, গণপরিবহন ও গণপরিসরে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও করণীয় নিয়ে দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইনজীবী অ্যাড. ফাতেমা খাতুন।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতা ও উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।