হাসিনার উপর হামলায় ‘পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি’র গ্রেনেড
ঢাকা জার্নাল (চট্টগ্রাম): একুশে আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় ছোঁড়া গ্রেনেডের গায়ে পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (পিওএফ) লেখা ছিল বলে তথ্য দিয়েছেন ১৪ দলের শীর্ষ নেতা ও জাসদ কার্যকরী কমিটির সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল। চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রকাশ করে সাংসদ বাদল আরও জানিয়েছেন, গ্রেনেড হামলার এক ঘণ্টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী কর্নেল ফারুক তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুরুজ্জামান বাবরকে ফোনে প্রশ্ন করেছিলেন শেখ হাসিনা মরলো না কেন?
শনিবার (২২ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দ্রুত বিচার দাবিতে ১৪ দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সাংসদ বাদল এসব তথ্য দেন। ১৪ দলের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে ১৪ দল নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, জনসভায় ছোঁড়া দু’টি গ্রেনেড অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল। সেগুলোর গায়ে পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি লেখা ছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুকের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার বিষয়টিও আমি বলেছি। এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আমার হাতে আছে। আমি তথ্যগুলো প্রমাণ করতে সক্ষম।
বাদল বলেন, ‘ফারুক বিদেশে থাকুক কিংবা জেলের ভেতরে থাকুক, ফারুক মোবাইলে লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফোন করে তথ্যটি জানতে চেয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত কল রেকর্ড যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে। ’
সভায় বাদল আরও বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত যতই গভীরে যাচ্ছে ততই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ মামলার যথাযথ পরিসমাপ্তি ঘটলে অভিশপ্ত কর্মকান্ডের জন্য দায়ী বিএনপি সম্পর্কে জনগণ অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের মধ্যে এক অদ্ভুত সখ্যতা আছে। ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। তবে বিদেশে থাকায় তার দুই কন্যা বেঁচে যান। ২১ আগস্ট ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার দ্বিতীয় ব্লুপ্রিন্ট। সেদিন শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ ২২টি প্রাণ বলি হয়েছিল।
একুশে আগস্টের মামলার বিচারে ধীরগতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রাম থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কোন ইস্যুতে চট্টগ্রাম আন্দোলন করলে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
‘চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জাতীয় সংসদের পিটিশন কমিটিতে চিঠি দেয়া হোক। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে দীর্ঘ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে ঢাকায় প্রেসক্লাব ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে দিনব্যাপী মানববন্ধন করতে হবে। ’ প্রস্তাব দেন বাদল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ১৪ দলের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মহিউদ্দিন বলেন, গ্রেনেড হামলায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি না হলে আরও ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঘটতে পারে। জঙ্গিবাদি গোষ্ঠীর কাছে বড় অঙ্কের অর্থের যোগান যাচ্ছে। কিছু কিছু মাদ্রাসা ও মসজিদে জঙ্গিবাদিরা আশ্রয় নিয়েছে এবং প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এগুলোর উপর সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ১৪ দল নেতা অ্যাডভোকেট আলী আহমদ নাজির, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, বদিউল আলম, অ্যাডভোকেট মো.আবু হানিফ, মাওলানা নজরুল ইসলাম আশরাফী, অমূল্য বড়ুয়া, সামশুদ্দিন খালেদ সেলিম, স্বপন সেন, মিঠুল দাশগুপ্ত, আবুল মনসুর, গৌরাঙ্গ চন্দ্র ঘোষ, অমল মিত্র, ফিরোজ আহমদ, পীযুষ বিশ্বাস, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, হাবিবুর রহমান, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, আজিজুর রহমান আজিজ, ফরহাদুল ইসলাম রিংকু, চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলে রাব্বি সুমন।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২২, ২০১৫