হজের নামে মানব পাচার বন্ধ করছে সরকার
ঢাকা জার্নাল: ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, হজের নামে মানব পাচার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
এছাড়া বিগত পাঁচ বছরে যারা হজ্জ করেছেন (২০০৮ সালে যারা হজ করেছেন) তারা এবার হজ্জে যেতে পারবেন না। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী বিশ্বের সব দেশের জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ফ্যাক্সে পাঠানো হয়েছে সৌদি আরব থেকে।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এ তথ্য জানান সচিব।
সচিব জানান, মানব পাচার বন্ধ, হাজীদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতেও সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ লক্ষে এজেন্টদের প্রতারণা ঠেকাতে চুক্তিবদ্ধ বাসাবাড়ি ছাড়া অন্য কোন বাসায় হাজিদের রাখার ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে।
মানব পাচার, হাজীদের ভোগান্তি, প্রতারণা এবং হজের নামে বাংলাদেশী হিসেবে রোহিঙ্গা পাচার ঠেকাতে সরকার সুনিদিষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ধর্ম সচিব বলেন, “পাঁচ বছরের মধ্যে এক বারের বেশি কেউ হজে যেতে পারবেন না। আর চুক্তি ছাড়া কোন হাজিকে অন্য কোন বাসায় রাখা যাবে না। বাড়িভাড়া চুক্তির বাইরে হাজীদের রাখার বিষয়টি তদন্ত করে সৌদি সরকার ৭০টি এজেন্সীর বিরুদ্ধে তালিকা তৈরী করেছে।”
ধর্ম সচিব জানান, পাঁচ বছরের মধ্যে যারা দ্বিতীয় বার গোপনে হজে যাবেন তাদের জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে ফিরে আসতে হবে। পাসপোর্ট ভিাসায় ধরা না পড়লেও জেদ্দা বিমান বন্দরে আঙুলের ছাপেই তারা ধরা পড়বেন।
এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে ধর্ম সচিব বলেন, “হজের নামে যারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন তারাও বিপদে পড়বেন। আর যেসব এজেন্সী পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেবে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ ফৌজদারি আইনে মামলা করা হবে।”
অতিরিক্ত মুনাফা না করার পরামর্শ দিয়ে ধর্ম সচিব বলেন, “সরকারী হিসেবে হজে গিয়ে গত বছর ১ হাজার ২৪৫ জন ফেরেননি। বেসরকারীভাবে হয়ত এর সংখ্য ২ থেকে ৩ হাজার হতে পারে। যারা হজে গিয়ে ফেরেননি, তারা ভয়ানক কষ্টে রয়েছেন। পুলিশি আতঙ্কেও মধ্যে পালিয়ে জীবন-যাপন করছেন তারা।”
সচিব জানান, বিভিন্ন এজেন্সীর বিরুদ্ধে গত বছর ১৩টি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৭০টি এজেন্সীর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।”
হাজি ক্যাম্পের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব বজলুল হক বিশ্বাস জানান, গত বছর সাড়ে পাঁচ হাজার পাসপোর্ট আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। যারা বাংলাদেশী পাসপোর্টে পালিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করেছে। ৭৩টি এজেন্সিীর বিরুদ্ধে মানব পাচার হাজিদের সঙ্গে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিলসহ ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “এবারও পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হবে।”
হজে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে সচিব বলেন, কম খরবে হজে যাওয়ার ফাঁদে পড়বে না। যারা প্রকৃত হজ করতে ইচ্ছুক তরা আগামী ৩০ মে’র মধ্যে নির্ধারিত টাকা জমা দেবেন। এ সময়ের পর আর কোন সুযোগ থাকবে না।
এদিকে গত সোমবার হজ পালনের পৃথক সুযোগ-সুবিধা রেখে দু’টি হজ প্যাকেজ ১০১৩’এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত সোমবার এ খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্যাকেজ অনুযায়ী সরকারি ভাবে ১০ হাজার হজ্জযাত্রী নেয়া হবে। আর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্জের উদ্দেশ্য যেতে পারবেন।
কম আয়ের মানুষেদের জন্য হজ করার সুযোগ করার জন্য এ প্যাকেজ নেয়া হয়েছে। প্রথম প্যাকেজে মোট খরচ হবে কোরবানী বাদে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৭ টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজে খরচ হবে কোরবানী বাদে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪২ টাকা।
প্রথম প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৯১ টাকা এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া ৮৩ হাজার ৭৯০ টাকা। হজযাত্রীদের কোরবানীর জন্য আলাদাভাবে কমপক্ষে সাড়ে চার শত (৪৫০) সৌদি রিয়াল নিজ দায়িত্বে নিয়ে যেতে হবে।
এবার হ্জযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া গতবারের চেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার ভাড়া হবে ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৭ টাকা। গতবারে এ ভাড়া ছিল এক লাখ ২৩ হাজার ৬২০ টাকা। তবে ডলারের দাম কমলে বা বৃদ্ধি পেলে বিমান ভাড়া বাড়তে বা কমতে পারে।
উল্লেখ্য, গত বছর মোট হজ যাত্রী ছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার। এবার বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলো (নন ব্যালটি) হজযাত্রীদের কাছ থেকে সরকারী প্যাকেজের চেয়ে কম খরচে হজ যাত্রী নিয়ে যেতে পারবে না।
ঢাকা জার্নাল, মার্চ ১৯, ২০১৩