সোয়ান শ্রমিকদের সংহতি সমাবেশ, শক্ত হাতে দাবি আদায়ের অঙ্গীকার
ঢাকা জার্নাল: শক্ত হাতে আন্দোলন করেই দাবি আদায়ে এক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সোয়ান গার্মেন্ট শ্রমিকরা। সোমবার শাহবাগে সংহতি সমাবেশে এ আহ্বান জানান তারা। সংহতি সমাবেশে শমিক নেতারা বলেন, জেলখানায় যেতে চাই, তবু শ্রমিকের পাওনা চাই।
তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস প্রদান; মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বে-আইনীভাবে বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন শ্রমিকরা।
শাহবাগের জাতীয় যাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে বৃটিশবিরোধী সংগ্রামী বর্ষীয়ান শ্রমিকনেতা জসিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, জেল খেটে, বৃটিশ তাড়িয়ে, পাকিস্তান হটিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম। সোয়ানের শ্রমিকরা না খেয়ে মরবে, ঈদের দিন রাস্তায় রাস্তায় কাঁদবে, দেশের স্বাধীনতা বড়লোক গার্মেন্ট মালিকরা ভোগ করবে এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। আজকের এই পরিস্থিতি এটাই শিক্ষা দেয় সকল শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লুটেরাদের হটিয়ে মেহনতি জনতার রাষ্ট্র কায়েম করা ছাড়া উপায় নাই।
চুরানব্বই বছর বয়সী বিপ্লবী জসিম উদ্দিন মণ্ডল আরো বলেন, যদি অনতিবিলম্বে সোয়ান শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেয়া না হয়, তাহলে এই বয়সে সোয়ানের শ্রমিকদের দাবি আদায়ে তিনি আবার রাস্তায় নামবেন।
তিনি বলেন, এ জীবনে সতের বছর জেল খেটেছি। বর্তমান সমাজে পুরো দেশটাই গরীবের জন্য জেলখানায় পরিণত হয়েছে। তাই এই বয়সে আবার জেলখানায় যেতে চাই, তবু সোয়ানের শ্রমিকদের দাবি আদায় করতে হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সোয়ানের শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে সমগ্র দেশবাসীর সমর্থন আদায় করেছে। কতিপয় লুটেরা ধনিক ছাড়া সকলেই সোয়ান শ্রমিকদের দাবিতে একাত্ম।
তিনি আরো বলেন, সোয়ান গার্মেন্ট এর শ্রমিকরা বাংলাদেশকে এবং সমগ্র বিশ্ববাসীকে আন্দোলনের নতুন শিক্ষা দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও ও বোমাবাজীর আন্দোলনের বিপরীতে শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রের নতুন পথ রচনা করেছে। এই পথ ধরে সারাদেশের মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি বর্ষীয়ান জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন আর সোয়ান শ্রমিকরা রাস্তায় ঈদ করে এটা মেনে নেয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক হয়ে থাকলে অবিলম্বে শ্রমিকদের দায়িত্ব নিন।
মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শ্রমিকরা কোনো অন্যায় আবদার করে নাই। তাদের আইনগত পাওনা তারা চেয়েছে। বন্ধ কারখানা খুলতে বলেছে, তারা কাজ করতে চায়, ভিক্ষা চায় না। এটা খুবই যৌক্তিক দাবি তাই তা মেনে নিতে হবে।
অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পরও আজ তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হয়। এটা মেনে নেয়া যায় না। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার স্বার্থে সোয়ান শ্রমিকদের দাবি মেনে নিন। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করুন।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক কমরেড সাইফুল হক প্রশ্ন তোলেন, মাত্র তের’শ শ্রমিকের দায়িত্ব নিতে না পারলে সরকারের কাজ কি? শ্রমমন্ত্রী কি করেন? আবার আমরা দেখছি ইসলামী ব্যাংক শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয় সকলে মিলে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি টালবাহানা না করে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে সোয়ানের সঙ্কট সমাধান করার দাবি জানান।
সংহতি সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিম-লীর অন্যতম সদস্য প্রবীণ জননেতা কমরেড হায়দার আকবর খান রনো, রাজনীতিবীদ নুরুর রহমান সেলিম, অ্যাড. আব্দুস সালাম, মোশরেফা মিশু, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সভাপতিম-লীর সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি সাদেকুর রহমান শামীম, সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদিন, সোয়ান গার্মেন্ট শ্রমিকনেতা শেখ ফরিদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল প্রমুখ।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাড. মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশ পরিচালনা করেন শ্রমিকনেতা মঞ্জুর মঈন।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ৩, ২০১৫।