সরকার ও বিরোধী দল কেউ স্পিকারের রুলিং মানেনি
ঢাকা জার্নাল: স্পিকারের রুলিং মানেনি সরকার ও বিরোধী দল। রুলিং লঙ্ঘন করেই দু’পক্ষ অসংসদীয় ভাষায় পাল্টা-পাল্টি আক্রমণাত্মক বক্তব্যে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন।
তারেক রহমান ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার নিয়ে সরকারি দলের নাজমা আখতার কটাক্ষ করার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংসদ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করে পুনরায় অধিবেশনে ফিরে আসে বিরোধী দল।
ব্যক্তি আক্রমণাত্মক, অসংসদীয় ও মর্যাদাহানীকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে স্পীকার বারংবার সতর্ক করলেও অনেককেই নিবৃত্ত করতে পারেননি।
সোমবার জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনাকালে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, সরকার তারেক জিয়াকে ভয় পায়। সিটি নির্বাচনে জনগণ সরকারকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়েছে। জবাবে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, তারেক জিয়াকে শুধু সরকার নয়, পুরো দেশের মানুষ ভয় পায়। কারণ তারেক দেশে আসলে আবার ২১ আগস্টের মতো গ্রেনেড হামলা হবে, দেশের সম্পদ লুন্ঠন হবে, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হবে। বিরোধী দল বিএনপিকেই গত নির্বাচনে দেশের জনগণ ‘লালকার্ড’ দেখিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়েছিল।
সোমবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, এ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান, শহীদুজ্জামান সরকার, এস কে আবু বাকের, সাধন চন্দ্র মজুমদার, জাহিদ মালেক স্বপন, নাজমা আখতার, শামসুল হক চৌধুরী, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ, বিএনপির মাহমুদুল হাসান প্রমূখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ১৮ দলীয় জোটের শরিক বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সরকার রক্ষকের নামে এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। রানা প্লাজায় মানুষ উদ্ধারে সরকারের কাছে ড্রিল মেশিন পর্যন্ত নেই, অথচ সরকার রাশিয়া থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনে। এই অস্ত্র দিয়ে সরকার কার সঙ্গে যুদ্ধ করবে? পিলখানায় যে ক্ষতি হয়েছে, শেয়ার বাজারের মানুষ যেভাবে পথে বসেছে- সরকারের অস্ত্র কিনে কোন লাভ হবে না। বঙ্গবন্ধু ত্যাগের রাজনীতি করে গেছেন, সরকারি দল ক্ষমতায় থেকে কেন ভোগের রাজনীতি করছেন? তিনি বলেন, আমরা চাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার পালাবদল চাই।
হেফাজত সম্পর্কে তিনি বলেন, হেফাজতের প্রধান আল্লামা শফি একবার হেলিকপ্টার করে বগুড়ায় যাওয়ায় নিউজ হয়, বলা হয় এতো টাকা উনি কোথায় পেলেন। কিন্তু তোফায়েল আহমদ এই সাড়ে চার বছরে অন্তত ৪০ বার হেলিকপ্টারযোগে ভোলায় গেছেন, তার তো নিউজ হয় না। তিনি এত টাকা কোথায় পেলেন? হেফাজত জঙ্গী হলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয় কীভাবে? শেয়ারবাজারে মিডিল ক্লাস ফ্যামিলিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, তারা কখনও এ সরকারকে ক্ষমা করবে না। বিদ্যুত খাতে আগে শাহেনশাহ ছিলেন আজিজ খান, এখন বাদশা হয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। সরকার তারেক রহমানকে ভয় পায়, সে বীরের বেশেই দেশে ফিরবেন।
জবাবে সরকারি দলের নাজমা আখতার ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের সমালোচনা করে বলেন, উনি ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে এক নম্বর বক্তা, আর দল হিসাবেও এক নম্বর, নেতাও একজন। সারাদেশে এ দলটির কোথাও কোন শাখা বা নেতাকর্মী, সমর্থক নেই। চার সিটি করপোরেশনে জিতেই বিরোধী দল বলছেন সরকারকে নাকি জনগণ হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। কিন্তু বিগত নির্বাচনে দেশের জনগণ ‘লালকার্ড’ দেখিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছিল, সে কথা কী বিরোধী দল ভুলে গেছে?
তিনি বলেন, বিরোধী দল বলে আমরা নাকি তারেক রহমানকে ভয় পাই! আমরা কেন সারাদেশের মানুষই তারেক জিয়াকে ভয় পায়। কারণ তারেক জিয়া আসলে আবারও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হবে, হাওয়া ও খোয়াব ভবনে নিয়ে মা-বোনদের সম্ভ্রম নিয়ে কাড়াকাড়ি করা হবে, আবার জঙ্গীবাদের উত্থান হবে। তারেক জিয়াকে বিএনপি পুজো করতে পারে, কিন্তু তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? উনি তো
দুর্নীতিতে উচ্চ ডিগ্রী নিয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মায়ের আগের নাম ছিল লক্ষ্মী রাণী মারমা, বাবার নাম ছিল ইস্কান্দার মজুমদার। সেই খালেদা জিয়াই এখন ইসলামের নামে মায়াকান্না করেন।
তারেক জিয়াসহ ক’জন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নাম উচ্চারণ করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখলে বিরোধী দলের সদস্য তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। স্পীকার বারংবার ব্যক্তি আক্রমণ করে বক্তব্য না রেখে বাজেটের বিষয়ে কথা বলার জন্য আহ্বান জানান। বিরোধী দলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখার সময় স্পীকার নাজমা আখতারের মাইক বন্ধ করে দিলেও পরে তাঁকে বক্তব্য শেষ করার সুযোগ দেন।
বিএনপির মাহমুদুল হাসান বলেন, তত্ত্বাবধায়কের জন্মদাতা আওয়ামী লীগ। সেই আওয়ামী লীগই তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করেছে। সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাইলে এ ব্যবস্থা অবশ্যই ফেরত আনতে হবে।
সরকারি দলের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশবাসী চায়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যেকে ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। আসলে বিএনপির রাজনীতির ঠিকানা কী, তা নিজেরাই জানে না।
সরকারি দলের শামসুল হক বলেন, আন্দালিব পার্থকে সবাই চেনে। তাঁর বাবা জাতীয় পার্টিতে থাকতে এরশাদের কাছ থেকে ৫শ’ কোটি টাকা মেরে দিয়েছিল। তার মুখে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো জাতীয় নেতার সমালোচনা মানায় না। হারিছ চৌধুরী কোথায়? তাকে ধরলেই বিএনপির গোমর ফাঁস হয়ে যেত।
সরকারি দলের আরেক সদস্য খান টিপু সুলতান বিরোধী দলের সমালোচনা করে বলেন, সব সুযোগ সুবিধা নিলেও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে আসেন না। অসত্য প্রলাপ ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন। ধর্মের নামাবলি কাঁধে নিয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালাচ্ছে।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১৭, ২০১৩।