সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে নতুন নির্দেশনা,কী করা যাবে,কী করা যাবে না
ঢাকা জার্নাল রিপোর্ট
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন এক পরিপত্র জারি করেছে। এই পরিপত্রে বিদেশভ্রমণ থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করা অর্থের ব্যয়–সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে,সরকারের নিজস্ব অর্থে সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ,ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে এ ধরনের ভ্রমণ অত্যাবশ্যকীয় হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে ভ্রমণ করা যাবে।
যেসব ক্ষেত্রে বিদেশভ্রমণ করা যাবে সেগুলো হলো—পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের দেওয়া স্কলারশিপ বা ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নেওয়া।
এ ছাড়া বিদেশি সরকার বা প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে এবং সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যাবে।
সেই সঙ্গে প্রিশিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্টের (এফএটি) আওতায় বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির ২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। একান্ত অপরিহার্য হলে পিএসআই বা এফএটির আওতায় বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে কৃচ্ছ্রসাধনে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন বাজেটের আওতায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কোড থেকে কত অর্থ ব্যয় করা যাবে,তার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে,সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ,পেট্রল,অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক,অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
পরিপত্রে বলা হয়,সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান,জলযান, আকাশযান) খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো ‘টিওঅ্যান্ডই’–ভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে যেভাবে ব্যয় করা যাবে,পরিপত্রে সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে,বিদ্যুৎ,পেট্রল,অয়েল ও লুব্রিকেন্ট,গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে এবং সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান,জলযান,আকাশযান) বন্ধ থাকবে।
ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে ‘জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) বাবদ’ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে,সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়,বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর,দপ্তর,স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা,পাবলিক সেক্টর করপোরেশন ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানির পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের ১২ মে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছিল, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট,শিক্ষাসফর,এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ,কর্মশালা বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। যদিও সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেই নির্দেশনা শিথিল করা হয়।