সব হারিয়েও প্রাণে বেঁচে খুশি
ঢাকা জার্নাল: ঘরে যা ছিল সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই উদ্ধার করতে পারিনি। তবে আমার পরিবার ফিরে পেয়েছি তাতেই আমি খুশি। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ বালুর মাঠ বস্তিতে সব কিছু পুড়ে যাওয়ার পরে এমনভাবেই আহাজারি করছিলেন প্রতিবন্ধি হোসেন।
আগুন লাগার পরে হুইল চেয়ারে শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন তিনি। বলেন, পঙ্গু হওয়ার কারণে আগুন লেগেছে টের পেয়েও কিছু করতে পারিনি। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কেবল সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে আসতে পেরেছি। স্ত্রী চেষ্টা করেছে ঘরের জিনিসপত্র বের করার, পারেনি। এতে কষ্ট নেই, আমার পরিবারকে ফিরে পেয়েছি তাতেই আমি খুশি।
‘পরনের কাপড় ছাড়া সবই চলে গেছে’ কোথায় যাব? কি করবো? সবই তো চলে গেল! এমনভাবেই আহাজারি করছিলেন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নুরজাহান।
তিনি বলেন, বুড়া তো কবেই মারা গেছে। ছেলে, ছেলের বৌ, নাতি, নাতনি নিয়ে একা সংসার গড়ে তুলেছিলাম। ঘরে কেবল ফ্রিজ ছিল না।কষ্টের টাকায় সব করেছিলাম। চোখের পলকে সব শেষ হয়ে গেল।এখন শুধু পরনের কাপড়টা আছে।
বিলাপের সুরে তিনি বলছিলেন, রুবেলের জায়গা ভাড়া নিয়ে ১২টা ঘর তুলেছিলাম। টেলিভিশনে ঈদের অনুষ্ঠান দেখছিলাম। হঠাৎ কে যেন চিৎকার করলো আগুন, বের হয়ে দেখি আগুন আমার গায়ে লাগছে। সব ছেড়ে পালিয়ে গেলাম এখন আমার কি হবে!
‘ছাগল বিক্রি করা হলো না’
ঈদে বিক্রি করবো বলে দুইটা ছাগল কিনেছিলাম। একটা বাঁচাতে পেরেছি। আর একটা পুড়ে মারা গেল।
এমন আহাজারি ছিল শাহজাহানের।
তিনি বলেন, একাই থাকতাম একটা ঘর ভাড়া নিয়ে। সারাদিন রিক্সা চালাতাম আর বাড়িতে ছাগল পালতাম। ঈদের একদিন পরেও অনেকে পশু কোরবানি দেয়। দুইটা ছাগল ছিল। আগুন লাগার পরে একটা বের করতে পেরেছি, অন্যটা পুড়ে মারা গেছে। আর বিক্রি করা হল না।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে রাজধানীর হাজারীবাগ বালুর মাঠ বস্তিতে আগুন লেগে প্রায় ৪’শ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখানে প্রায় ১ হাজার ৫’শ থেকে দুই হাজার মানুষ বসবাস করতো। ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ১৮, ২০১৩