Lead

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা হবে অনলাইনে

সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস)’ নামে একটি অ্যাপও ইতোমধ্যে চালু করেছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। বুধবার (১৫ নভেম্বর) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের পদ্ধতিসহ বেশকিছু তথ্য সম্বলিত পরিপত্র-২ জারি করেছে ইসি। ইসির উপসচিব আতিয়ার স্বাক্ষরিত এই পরিপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।

এই পরিপত্রে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ হবে। তা হলো-

ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করে মনোনয়নপত্র দাখিল ইচ্ছুক ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি এবং নির্বাচনি এলাকার নম্বর ও নাম এন্ট্রি করে মনোনয়নপত্রের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবেন। ওই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে মনোনয়নপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।
ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রার্থী নিজের মনোনয়নপত্র এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র স্ক্যান করে পিডিএফ আকারে দাখিল করতে পারবেন।
এ পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর প্রার্থীর মোবাইল নম্বরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস-এর মাধ্যমে দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত হবেন।
রিটার্নিং অফিসার অনলাইনে প্রাপ্ত প্রত্যেকটি মনোনয়নপত্রে ক্রমিক নম্বর দিয়ে সেই নম্বরসহ মনোনয়নপত্রের পঞ্চম খণ্ডে প্রার্থীর নাম, দাখিলের তারিখ ও সময় এবং বাছাইয়ের স্থান, তারিখ ও সময় মনোনয়নপত্রের পঞ্চম খণ্ডে উল্লেখ করে স্বাক্ষর ও সীলমোহর দিয়ে পিডিএফ আকারে প্রার্থীকে ইমেইলে পাঠাবেন।
অনলাইনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের মূল কপি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত দিনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে।
এক আসনে একাধিক মনোনয়ন দাখিল হলেও জামানত একটির ক্ষেত্রেই দিতে হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর নির্ধারিত জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। জামানতের অর্থ নগদ বা ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে; অথবা জামানত হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনও শাখায় অথবা যে কোনও ব্যাংক অথবা সরকারি ট্রেজারি অথবা সাব ট্রেজারিতে অথবা সর্বশেষ সংশোধিত কোডে জমা দিতে হবে।

একটি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীর অনুকূলে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলে সে প্রার্থীর অনুকূলে শুধু একটি মাত্র জামানত দিতে হবে। অন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে চালান/রসিদের সত্যায়িত অনুলিপি দিতে হবে।

জামানতের টাকা ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলকারী/ প্রার্থীর কাছ থেকে অন্য কোনও রকম অতিরিক্ত কোনও অর্থ আদায় বা প্রদান করা যাবে না।

সময়সূচি ৯টা-৪টা

মনোনয়নপত্র দাখিল, জমা, বাছাই সবকিছুই সরকারি সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালিত হবে। অর্থ্যাৎ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রে আগের সময় অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কার্যক্রম চললেও নতুন সময় অনুযায়ী এটা বিকাল ৪টা পর্যন্তই চলবে।

মনোনয়নপত্র দাখিল সংক্রান্ত তথ্য ইসিতে প্রেরণ

মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর (৩০ নভেম্বর বিকাল ৪টা) মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্য কমিশন সচিবালয়ে ফ্যাক্স ও বিশেষ বাহক মারফত পাঠাতে হবে। তাছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের তথ্য Election Management System (EMS) এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে।

মনোনয়পত্র বাছাই

তফসিলে ঘোষিত সময় অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শেষ করবেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থীরা, তাদের নির্বাচনি এজেন্ট, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী বা নিযুক্ত অন্য কোনও ব্যক্তি উপস্থিত থাকতে পারবেন। তারা মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করে দেখতে ইচ্ছা করলে সে সুযোগ দিতে হবে। উপস্থিত সবার সামনে রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন এবং কেউ কোনও আপত্তি উত্থাপন করলে তা নিষ্পত্তি করবেন।

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের জন্য ৪ দিনের মধ্যে প্রথম ২ দিন মনোনয়নপত্রগুলো চেকলিস্ট অনুসারে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে শতকরা ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর/তথ্য কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে যাচাই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি শাখা থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত তারিখের শেষ দিন লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন।

সারবত্তাহীন ত্রুটি

ছোটোখাট ত্রুটির জন্য কোনও মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। বাছাইয়ের সময় তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব এমন কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি নজরে এলে তা মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। কোনও প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করলে তার একটি মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কারণে তার অন্য কোনও বৈধ মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ শুধু একটি মনোনয়নপত্র বৈধ হলেই তার প্রার্থীপদ অটুট থাকবে। প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করলে বাছাইয়ে তার একটি বৈধ পাওয়া গেলে অন্যগুলো বাছাইয়ের প্রয়োজন হবে না।

ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নামের শুদ্ধতা নির্ধারণ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে দেশের যে কোনও একটি এলাকার ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে। ফলে মনোনয়নপত্রে প্রার্থী ভোটার তালিকায় ক্রমিক নম্বর, ভোটার নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও লিপিবদ্ধ করতে হবে।

ভোটার তালিকায় কোনও প্রার্থীর নামের বানান অথবা পিতার নাম, স্বামীর নাম ঠিকানা বা এ সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে নাও থাকতে পারে। ভোটার তালিকায় এ ধরনের ভুল অনেকের দৃষ্টি গোচর হওয়া সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। শুদ্ধভাবে প্রার্থীর নামসহ অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে গিয়ে ভোটার তালিকায় উল্লিখিত নাম বা অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে হুবহু নাও মিলতে পারে। এ ধরনের অমিলের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না।

মনোনয়নপত্রে ভোটার তালিকায় ক্রমিক নং, ভোটার নম্বর, ভোটার এলাকার নাম বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিপিবন্ধকরণে কোনও ভুল করলেও মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না।

প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর ক্ষেত্রেও এ ভিন্নতা ও শুদ্ধিকরণ গ্রহণযোগ্য হবে। উল্লিখিত ক্ষেত্রে প্রার্থীর বা প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীর নামের বানান ও তথ্যাদি যাচাইয়ের জন্য প্রার্থীর বা প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীর এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট বা অন্য কোনও সার্টিফিকেট অথবা স্বীকৃত কোনও পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হতে হবে।

মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে রিটার্নিং অফিসারের দেওয়া যেকোনও সিদ্ধান্তে কোনও প্রার্থী বা কোনও ব্যাংক সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ বিকাল ৪টার মধ্যে প্রার্থী অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি বা কোনও ব্যাংক আপিল দায়ের করতে পারেন।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার

বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী লিখিত ও স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অথবা তার আগে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারবেন।

সাপ্তাহিক ও ছুটির দিনে অফিস খোলা রাখা

সব কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে বিশেষ করে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণের দিনগুলো, প্রতীক বরাদ্দসহ গুরুত্বপূর্ণ দিনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস ও উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত শেষ দিন এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত শেষ দিন বিকাল ৪টার পর কোনও মনোনয়নপত্র দাখিল বা গ্রহণ করা যাবে না, অথবা কোনও প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন না।