Lead

‘সংলাপেই সমাধান’

0,,16642269_302,00ঢাকা জার্নাল: রাজনৈতিক অস্থিরতা আর টানা হরতালেও অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার বিকল্প উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ কিন্তু তাতে অর্থনীতির ওপর থেকে হরতালের নেতিবাচক প্রভাব কতটুকু কমান যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা৷

তাঁরা মনে করেন সংকট নিরসনে রাজনৈতিক সমঝোতা ও দুই নেত্রীর সংলাপের কোনো বিকল্প নেই৷

চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর এখন সচল হয় গভীর রাতে৷ হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এড়িয়ে বিদেশে পণ্য পাঠানো এবং বিদেশে থেকে আসা পণ্য খালাসের জন্য গভীর রাতকেই এখন উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা৷ আর এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে৷ দিচ্ছে বন্দরের সব ধরণের সুবিধা৷ বন্দরের নিরাপত্তা পরিচালক লে. কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আমদানি এবং রপ্তানিকারদের সুবিধা অনুযায়ী তারা এখন বন্দর পরিচালনা করছেন৷

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে ১৬টি কন্টেনার ডিপো আছে৷ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৩ হাজার কন্টেনার সেখানে পড়ে আছে৷ গভীর রাতে বন্দরে কন্টেনার ওঠা নামার সুযোগ দেয়ায় এই জট কমতে শুরু করেছে৷

এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্র থেকে শাখা অফিস শুক্র এবং শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন জানান, নতুন অর্থবছরের প্রস্তুতি এবং রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্যই এই ব্যবস্থা৷ তিনি বলেন, নানা জটিলতায় ২৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব অনাদায়ি পড়ে আছে৷ এনিয়ে মামলা মোকদ্দমাও আছে, যার নিষ্পত্তি করতে হবে৷

অন্যদিকে, বৈদেশিক বণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এবং বিদেশি মুদ্রার লেন দেন করে বণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ ধরনের সব শাখা শুক্র এবং শনিবারে খোলা থাকছে৷ বিমান, নৌ এবং সমুদ্রবন্দরে ব্যাংকের শাখাগুলোও বন্ধের দিন খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক সাসকো গ্রুপের চেয়ারম্যান আতিয়ার দিপু জানান, এখন তৈরি পোশাক শিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত রাখছেন হরতাল আহ্বানকারীরা৷ ফলে তারা কারখানা খোলা রাখতে পারছেন৷ উৎপাদনে তেমন সমস্যা নেই৷ বন্দরেও অসুবিধা নেই৷ কিন্তু কারখানা থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহণে পথে হামলার আশঙ্কা আছে৷ তাই রপ্তানি পণ্য পরিবহনও হরতালের আওতামুক্ত রাখতে হবে৷

এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এবং হামিম গ্রুপের প্রধান একে আজাদ বলেন, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়৷ কোনোমতে টিকে থাকার জন্য চেষ্টা৷ তাই প্রতিযোগিতার এই সময়ে টিকে থাকতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন৷ প্রয়োজন হরতালকে গুডবাই বলা৷ আর তার জন্য রজনৈতিক সমঝোতা জরুরি৷ এ কারণেই তারা ৬ই এপ্রিল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মহাসমাবেশ ডেকেছেন৷

শোনা যাচ্ছে, হরতাল পরিহার করে দুই নেত্রীকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান হবে সমাবেশ থেকে৷

এদিকে বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম মনে করেন, ছুটির দিনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, বন্দরে গভীর রাতে কাজ করা, অথবা কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান হরতালের আওতামুক্ত রেখে হয়ত অর্থনীতিকে কোনোভাবে সচল রাখা যায়৷ কিন্তু অর্থনীতির গতি ধরে রাখা যায় না৷ আর হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা একটি নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করে, যা বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বাণিজ্যে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে৷

তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা সমাবেশ করে শুধু হরতালের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং দুই নেত্রীর সংলাপের কথা বললেই হবে না৷ তারা যেন রাজনৈতিক সংকট নিরসনের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের মডেলও উপস্থাপন করেন৷ সূত্র: ডি ডব্লিউ

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.