রায় ‘ফাঁস’: ট্রাইব্যুনালের সেই কম্পিউটার জব্দ
ঢাকা জার্নাল: সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালর যে কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয়েছিল, তা জব্দ করেছে পুলিশ।
রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
ঊর্ধ্বতন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রায় যে কম্পিউটারে লেখা হয়েছিল, তা জব্দ করা হয়েছে। রায়ের ড্রাফট কম্পোজের কাজে যারা জড়িত ছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
“কারা সেখানে ড্রাফট লিখত, ডাটা এন্ট্রি করত, সে ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি,” বলেন তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি ওই কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের খসড়া এই কম্পিউটার থেকেই আগে কোনোভাবে ফাঁস হয়েছিল বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা।
খসড়া ওই রায় একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। রায়ের পর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া প্রিন্ট সাংবাদিকদের দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
রায় ফাঁসের বিষয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কাউকে আটক করেনি গোয়েন্দা পুলিশ।
সালাউদ্দিন কাদেরের রায় ফাঁস নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বুধবার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার রায় পড়ার সময়ই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, “এগুলো পড়ার দরকার নাই, এগুলো তো গত দুদিন ধরে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।”
রায়ের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফরহাত কাদের বলেন, আদালতের রায়ের কপি এক দিন আগেই কয়েকটি ওয়েবসাইটে পেয়েছেন তারা।
এই রায় আইন মন্ত্রণালয়ে তৈরি হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে তা ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দণ্ডিতের পরিবারের অভিযোগ উড়িয়ে দেন।
ট্রাইব্যুনালের জিডিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রচারিত সমস্ত রায় ট্রাইব্যুনালেই প্রস্তুত করা হয়। রায় ঘোষণার আগে রায়ের কোনো অংশের কপি অন্য কোনোভাবে প্রকাশের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও কথিত খসড়া রায়ের অংশ কীভাবে ইন্টারনেটে প্রচারিত হলো বা কীভাবে ট্রাইব্যুনাল থেকে খসড়া রায়ের অংশবিশেষ ফাঁস হল তা উদ্বেগের বিষয়।”
ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক নাসিরউদ্দিন মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রায় ঘোষণার কয়েকদিন আগে খসড়া পর্যায়ে তা ফাঁস হয়ে থাকতে পারে। ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকেই খসড়া ‘লিকড’ হয়ে থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কথিত খসড়া রায়ের অংশবিশেষ www.tribunalleaks.be নামের একটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়, যা থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে।
তবে ফাঁস হওয়া খসড়া পূর্ণাঙ্গ রায় নয় জানিয়ে নাসিরউদ্দিন বলেন, ওই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কথিত রায় ১৬৫ পৃষ্ঠার। আর ট্রাইব্যুনালের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়টি ১৭২ পৃষ্ঠার।
রায়ের প্রথম অংশে বিচারকের নাম, প্রসিকিউটরদের নাম, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নাম, ভূমিকা, কার্যবিবরণী, ঐতিহাসিক পটভূমি, ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনাল আইনের নানা বিষয়ের সংজ্ঞা, বিভিন্ন বিদেশি আইনের প্রসঙ্গ, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর ক্ষমা, এই বিচার বিলম্বিত হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
কথিত রায়ে এসব থাকলেও হুবহু মিল নেই। রায়ে আদালতে সাকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কথা উঠে এলেও ফাঁস হওয়া রায়ে তা এসেছে আংশিকভাবে।
কথিত এই রায় ফাঁস নিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন বুধবার ট্রাইব্যুনালে বলেন, “দেশের মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। এর পেছনে মস্তবড় বিনিয়োগ ও ষড়যন্ত্র আছে।”