যুদ্ধপরাধ: আট জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষ
ঢাকা জার্নাল: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আরো আট জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষ করে এনেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা৷ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দুই জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা৷
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা৷ এর মধ্যে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হয়েছে৷ বাচ্চু রাজাকার ও সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ আর কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম, আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান, বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম এবং সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের বিচারকাজ চলছে৷ আগামী এপ্রিলেই দু’জনের মামলার বিচার কাজ শেষ হতে পারে বলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে৷ তারপর যে কোনো সময় রায় ঘোষণা হতে পারে৷
তবে অন্য দু’জনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কিছুটা সময় লাগবে৷
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জামায়াত নেতা ও দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলী, জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম, আবদুস সোবহান, মো. ইউসুফ, মো. খোকন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ কায়সার, আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ এখন চলছে৷ এর মধ্যে আশরাফুজ্জামান ও মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ রয়েছে৷ এই দুই জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা৷ এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়া হবে৷ অবশ্য এই দুই জনই দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন৷
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক (পুলিশের মহাপরিদর্শক পদমর্যাদা সম্পন্ন) আবদুল হান্নান খানও এমন কথাই বললেন৷ তিনি বলেন, ৪২ বছর আগের ঘটনা হওয়ার সাক্ষী প্রমাণ খুঁজে পেতে তাদের কিছুটা সময় লাগছে৷ তাছাড়া অনেক সাক্ষী এখন আর বেঁচে নেই৷ অনেক প্রমান বা আলামত ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে৷ তারপরও এক সপ্তাহের মধ্যেই আশরাফুজ্জামান ও মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে৷ আর এপ্রিল মাসের মধ্যেই অন্তত চার জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে৷ অন্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন যত দ্রুত সম্ভব দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা৷
হান্নান খান বলেন, শুধু তদন্ত করলেই হয় না, সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কাজটিও তাদের করতে হয়৷ তাই প্রতিবেদনে সাক্ষীদের ক্ষেত্রেও তাদের সতর্ক থাকতে হয়৷ তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, অনেক কষ্ট করে রাজধানীর বাইরের মফস্বলের দূর-দূড়ান্ত থেকে থেকে সাক্ষীদের আনতে হয়৷ কিন্তু তুচ্ছ অযুহাতে আসামীপক্ষ কালক্ষেপনের জন্য শুনানি না করে সময় বাড়ানোর আবেদন করে৷ ফলে নির্ধারিত দিনে শুনানি না হলে তাদের হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়৷ এতে করে চলমান তদন্ত কাজও বাধাগ্রস্থ হয়৷ এ ধরনের ঝামেলায় পড়ার কারণে অনেক সময় তদন্ত শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়৷
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে আর ৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷ তদন্ত কাজে এত ধীরগতি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হান্নান খান বলেন, সাক্ষী আনা নেয়া করতেই অনেক সময় চলে যায়৷ তাছাড়া তদন্ত প্যানেলও খুব বেশি বড় নয়, ১৯ সদস্যের৷ এছাড়া যেনতেন ভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলেই তো আর হবে না, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দিতে হয়৷ এতে একটু সময় তো লাগেই!