Lead

মূল্যস্ফীতি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: শেখ হাসিনা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সেক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী অপরাধ এগুলো খুঁজে বের করা, এসব বন্ধ করতে হবে। আমাদের দল ছাড়া কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, আমরা জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি সেটা কিন্তু কাজের স্বীকৃতি। দেশে মানুষের জন্য আমরা কাজ করেছি, দেশের মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে, আমাদের জয়ী করেছে। সেখানে হয়তো কেউ জিততে পেরেছে, কেউ জিততে পারেনি। হার-জিত যাই হোক সেটা সবাইকে মেনে নিয়ে অন্তত নিজের দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যদি একে অপরের দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকি, এটা আমাদের বিরোধী দলকে আরও উৎফুল্ল করবে, তাদের কিছু সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, যে দল নির্বাচন করে না, তারা তো গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচন করায় অভ্যস্ত না। যেসব জরিপ আন্তর্জাতিকভাবে হয়েছিল তাতে স্পষ্ট ছিল বিএনপি তাদের জন্য নির্বাচন করলে কখনও সরকার গ্রহণ করার মতো সাফল্য অর্জন করবে না। সেরকম সিটও তারা পাবে না। আওয়ামী লীগের বেলায় সার্ভে ছিল, শুধু একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। আওয়ামী লীগ পর্যাপ্ত সিট পাবে। এ কথা শোনার পর তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তো স্বাভাবিক। তাছাড়াও ওদের সৃষ্টি হয়েছিল অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের পকেট থেকে। জনগণের ভোট চুরি করা, নির্বাচনে কারচুপি করা, এসব কালচার বিএনপির আমলেই সৃষ্টি। তারা ওটাই ভালো বুঝতো।

গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনার বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আগের চরিত্র দেখলাম গত ২৮ অক্টোবর। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। ২০১৩ সালে এভাবে মেরেছিল। সেই একই চিত্র আমরা আবার দেখলাম। তারা বলে ওখানে উসকানি দেওয়া হয়েছিল। যে অঞ্চলে পুলিশকে মারলো সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলই না। ওরাই পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে, গাড়ি পোড়ায়। প্রধান বিচারপতির বাড়ি, জাজেস কোয়ার্টার, সাংবাদিক, কেউ ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমাদের মহিলারা মিছিল নিয়ে আসছিল, তাদের ওপর আক্রমণ করে। এই ঘটনা ঘটিয়ে তারা আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে কাঁদে। তাদের মুরুব্বিদের কথামতো আবার কান্নাকাটি। তারা বলে সেটা উসকানি, আসলে উসকানিটা দিলো কে? উসকানি দেওয়ার মতো তো কেউ ছিল না। পুলিশ তখন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যে উন্নয়নের কাজগুলো আমরা করছি, সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতে হবে। আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

দ্রব্যমূল্য মানুষের এখন কষ্টের কারণ এমনটা স্বীকার করে সরকারপ্রধান বলেন, এখন মানুষের সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আমরা সেটা অনেকটাই কমিয়ে এনেছি। এখানে কিছু কিছু মহল আছে। একটু চক্রান্ত করেই মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। তবে এটাও সত্য যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে এতটা ছিল না। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছি। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি থেকে পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি। এই কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ করে দিয়েছি। মানুষ যেন কষ্ট না পায়।

তিনি বলেন, সামনে রোজা। এই রোজার সময়ে যা যা দরকার, তার সবই আগাম কেনার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা রমজানে হতদরিদ্রদের বিনা পয়সায় খাদ্য দিয়ে থাকি। সেই ব্যবস্থাও আমরা করবো। ওএমএস চালু থাকবে। মানুষের যাতে কিনতে অসুবিধা না হয় সেই ব্যবস্থাটা আমরা করবো। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হ্রাস যাতে আরও টেনে ধরা যায়—তার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি। খাদ্য উৎপাদনে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। তারপরও কিছু জিনিস বিদেশ থেকে কিনতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা আমরা তার থেকে দূরে নই। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে যে জিনিসগুলো আমদানি করতে হয়, যেমন—গম, ভুট্টা, এগুলো আমরা উৎপাদন করি। চাষ আমাদের বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই পণ্যগুলো আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে এতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারপরও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশনের ফলে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা থেমে নেই। আমরা রিজার্ভের টাকা খরচ করে করে সেগুলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকদের সংকটের কারণে আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে খরচ কমবে। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। রফতানি বহুমুখী করতে হবে। পাট, চামড়াসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করি। সেগুলো রফতানির জন্য বাজার খুঁজতে হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, প্রতি বছর বাজেট করার আগে ইশতেহার হাতে নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করি। আমরা যে ওয়াদা দেই তা রক্ষা করি। এবারও যে ইশতেহার দিয়েছি, সেখানে কী কী অর্জন করেছি, ভবিষ্যতে আমরা কী করবো—সেগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।

তিনি দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ইশতেহার ও দলের ঘোষণাপত্র ভালোভাবে পড়ার নির্দেশ দেন। বলেন, এটা পড়লে আমরা যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি তা ভালোভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। সেই মোতাবেক কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিয়েছে। সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ভূমিহীনদের ঘর করে দিয়েছে।