শীর্ষ সংবাদ

ফখরুলসহ শতাধিক আটক, মঙ্গলবার হরতাল

Fakrul-Risvi-sm20130311064216ঢাকা জার্নাল:  কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে দু’টি বোমা ও ১০টি ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে।

 

আটক হওয়া নেতাদের মধ্যে আরো রয়েছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সাদেক হোসেন খোকা, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, জামাল শরীফ হিরু, আবুল বাশার প্রমুখ।

 

আটকের কয়েক মিনিটের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ছ’টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ফখরুলকে।

 

এরপরও পার্টি অফিসে অবস্থান নেওয়া অন্য নেতাকর্মীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকে।

 

এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর যারা আছেন সবাইকে একে একে আটক ও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে।

 

ফখরুলকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে আরো ক’জন নেতাকর্মীর সঙ্গে আটক করা হয় যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে।

 

এর আগে বিকেলে নয়াপল্টনে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলা ও এক পর্যায়ে পুলিশি অ্যাকশন শুরুর পর প্রধান বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে পুলিশ।

 

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে শুরুর করার কিছুক্ষণের মধ্যেই নাইটেঙ্গল মোড় ও বিএনপি অফিসের মধ্যবর্তী এলাকায় পরপর ৫-৬ টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

 

মুহূর্তে সমাবেশ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে সঙ্গে হরতাল হরতাল স্লোগান দিতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পুলিশ এ সময় সম্পূর্ণ শান্ত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।

 

এ সময় আশপাশে কয়েকটি অফিসে ভাঙচুর চালায় তারা। বিভিন্ন বিল্ডিং এর ছাদে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। রাস্তায় পাশে পুলিশের ব্যারিকেড, ফুটপাতে কাঠের দোকান ও রাস্তার ডিভাইডার ভেঙে ফেলে। রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে টায়ারে আগুন জ্বালায়। এ সময় একটি মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

 

এ পরিস্থিতিতে যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দেয় পুলিশ। ইট-পাটকেল খেয়েও অ্যাকশনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে তারা।

 

এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিভিন্ন ছাদে দ‍ায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের আক্রমন করা হয়েছে খবর পেয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। এতে দ্রুত অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়ে জোটের নেতা-কর্মীরা।

 

এদিকে এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফকিরাপুল মোড়েও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদিকে হরতাল ঘোষণা করে পার্টি অফিসে ঢুকে পড়েন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের ধরতে পার্টি অফিসে ঢুকে পড়ে পুলিশ।

 

এ সময় পার্টি অফিসে ঢুকে ব্যাপক তল্লাসী চালায় পুলিশ। দু’টি ককটেল উদ্ধার করে রিজভীর কক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে পার্টি অফিস থেকে ২টি বোমা ও ১০ টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এগুলো নিষ্ক্রিয় করতে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বোমা বিশেষজ্ঞ একটি দল বিএনপি অফিসে আসে।

 

ফখরুলকে আটক করে নিয়ে যাবার সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি হাইকোর্টের জামিনে (বেইলে) আছি।’’

 

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কি আমাকে গ্রেফতার করবেন? আপনাদের অফিসারকে ডাকুন।”

 

তার কথায় খুব একটা কান না দিয়ে প্রথমে প্রিজন ভ্যানে তুলতে গিয়ে ফের পার্টি অফিসে ফিরিয়ে আনা হয় ফখরুলকে। পরে আবার ওই একই ভ্যানে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনির হোসেনকেও আটক করে পুলিশ।

 

পুলিশ রিজভীকে আটক করে নিয়ে যাবার সময় রিজভী বলেন, “জানি না কেন আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

 

বিএনপি কার্যালয়ে ঢোকার আগে আশপাশের অলিগলি ও রাস্তা থেকে বেশ ক’জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

 

তবে মহাসচিবের রুমে বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা দরজা আটকে বসে থাকেন। এক পর্যায়ে মহাসচিবের মূল রুমের দরজা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে ৫৩ জন নেতাকর্মীক আটক করা হয়। টয়লেট থেকে বের করে আনা হয় আরো ৪ জনকে।

 

আরো পরে মহাসচিবের রুমের ভেতরের ছোট রুমের দরজা ভেঙ্গে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সাদেক হোসেন খোকা, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, জামাল শরীফ হিরু, আবুল বাশার প্রমুখকে।

 

পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় আটক নেতারা কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

 

তবে পার্টি অফিসে আশ্রয় নেওয়া নারী কর্মীদের ধরা হবে না বলে জানান মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসান।

 

এর ফলে মহাসচিবের রুমে অবস্থান নেওয়া বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও সংরক্ষিত আসনের এমপি নিলোফার চৌধুরী মনিসহ নারী কর্মীরা আটকের হাত থেকে বেঁচে যান।
রাত সোয়া আটটার দিকে পার্টি অফিসে আটক ও তল্লাশী অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দেন মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসান।

 

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ১১, ২০১২ 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.