মিয়ানমারে সামরিক সরকার হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন বাড়িয়েছে: জাতিসংঘ
ঢাকা জার্নাল ডেস্ক:
মিয়ানমারে দৃশ্যত বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করতে সামরিক সরকার হত্যা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বাড়িয়েছে বলে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, দেশটিতে অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিন বছরের বেশি সময়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। সেনা সরকার কঠোরভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করে।
পরে ওই বিক্ষোভ সেনা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নিয়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে সেনাদের সঙ্গে চলছে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী লড়াই। এ ঘটনায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করার চেষ্টায় গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৫০ জন বেসামরিক লোক।
মিয়ানমারে বিদেশি তদন্তকর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় অংশত দেশের বাইরে থেকে শত শত ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদন।
ওই বেসামরিক লোকজনের মধ্যে ২ হাজার ৪১৪ জন মারা যান প্রতিবেদন তৈরির সর্বশেষ সময় গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। নিহত ব্যক্তির এ সংখ্যা এর আগের প্রতিবেদন তৈরির সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এসব মানুষের মধ্যে শত শত জন মারা যান বিমান হামলা ও কামানের গোলার আঘাতে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক দলের প্রধান জেমস রোডহেভার বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক থেকে মিয়ানমার অতল সাগরে ডুব দিচ্ছে।’
জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আইনি ব্যবস্থাকে ঢাল বানিয়ে, সব ধরনের ভিন্নমতকে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে বর্তমান সংকট তৈরি করেছে।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৪০০ জনকে। তাঁদের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোয় রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু–কিশোরও রয়েছে। তাদের বাবা–মায়েদের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণ করার কারণে একধরনের সাজা এটি।
এদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে প্রাণ গেছে অন্তত ১ হাজার ৮৫৩ জনের। তাঁদের মধ্যে শিশু ৮৮টি।