আন্তর্জাতিক

ভারতে জি-২০ সম্মেলন, কঠোর নিরাপত্তায় সাজ সাজ রব

ভারতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে নয়াদিল্লিতে এই সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা হাজির হবেন। এই সম্মেলনকে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের প্রদর্শনী হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অতিথিদের তালিকা থাকবেন। তবে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন বলে নয়াদিল্লি ও বেইজিং সূত্র জানিয়েছে।

জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং জার্মানির নেতারাও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য পশ্চিমের সমালোচনার মুখে থাকা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতে যোগ দিচ্ছেন না। তার বদলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন।

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানরাও উপস্থিত থাকবেন। আয়োজনটি সংস্কারকৃত প্রগতি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। যা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরের মাঝখানে একটি সম্মেলন-কাম-প্রদর্শনী কেন্দ্র।

শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার দীপেন্দ্র পাঠক বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। হোম গার্ড এবং আধা-সামরিক বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-সহ অন্যান্য সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী থেকে হাজার হাজার কর্মী আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মোতায়েন করা হবে।

তিনি আরও বলেছেন, বিক্ষোভ এবং জমায়েত রোধ করতে আমাদের পর্যাপ্ত এবং শক্তিশালী পুলিশ উপস্থিতি থাকবে।

শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে দীপেন্দ্র পাঠক থাকলেও সম্মেলনকেন্দ্রে দিল্লি পুলিশের আরেক বিশেষ কমিশনার রণবীর সিং কৃষ্ণিয়ার অধীনে একটি দল পাহারার দায়িত্বে থাকবে। যদিও রাজধানী তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ। গত মাসে প্রতিবেশী শিল্প শহর গুরুগ্রামে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে অন্তত সাতজন নিহত হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শীর্ষ সম্মেলনের সময় নয়াদিল্লির সীমান্ত ঘনিষ্ঠভাবে পাহারা দেওয়া হবে এবং শহরে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

২ কোটি জনসংখ্যার শহরে শীর্ষ সম্মেলনের সময় আংশিক বন্ধের পরিকল্পনা করছে সরকার। স্কুল, সরকারি দফতরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিল্লি পুলিশের ৮০ হাজার সদস্যসহ মোট ১ লাখ ৩০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী সম্মেলনের সময় পাহারায় নিযুক্ত থাকবে।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, দিল্লি এবং নিকটবর্তী এলাকায় সমন্বিত মহাকাশ প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে।

মুখপাত্র বলেছেন, বিমান বাহিনীসহ ভারতীয় সামরিক বাহিনী, দিল্লি পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি আকাশপথে হুমকি রোধ করতে ড্রোনবিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে। প্রায় ৪০০ দমকল কর্মীও মোতায়েন থাকবেন।

অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হচ্ছে এবং আইটিসি মৌর্য হোটেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ হোটেলগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই হোটেলে অবস্থান করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

চলতি বছরে জি-২০ এর সভাপতিত্ব করছে ভারত। মোদি এই সম্মেলনকে জাতীয় আয়োজনে পরিণত করেছেন। সুদূর অরুণাচল প্রদেশ এবং কাশ্মীরের শ্রীনগর শহরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশে এই গ্রুপের বিভিন্ন সভা আয়োজন করা হবে।।

বছরজুড়েই রাস্তা, বিমানবন্দর, বাস স্টেশন, পার্ক, রেলস্টেশন, সরকারি অফিস এবং সরকারি সংবাদমাধ্যমে জি-২০ সম্মেলনের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। নয়া দিল্লিতে নতুন ফোয়ারা এবং শোভাবর্ধনের জন্য গাছপালা প্রধান প্রধান সড়কের গোলচত্বরে বসানো হয়েছে। সঙ্গেরয়েছে কালো মুখের বানরের কাটআউট। শহরের বানরের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশ কয়েকটি এলাকায় এই কাটআউটগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

জুলাই মাসে রাজধানীতে ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি সম্মেলনকেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন মোদি। এতে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। শঙ্খ-আকৃতির কেন্দ্রটিতে ৩ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। সম্মেলনের নেতাদের যাতায়াতের জন্য ভারত সরকার ১৮ কোটি ভারতীয় রুপি ব্যয়ে ২০টি বুলেট-প্রুফ লিমোজিনও ভাড়া নিয়েছে।

অনেক বিশ্বনেতা তাদের নিজস্ব দেহরক্ষী এবং যানবাহন নিয়ে ভ্রমণ করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত দেশগুলো গাড়ি ও কর্মীদের সংখ্যার বিষয়ে ‘যুক্তিবাদী’ হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কোনও বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি। সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের ২০টিরও বেশি উড়োজাহাজ আসতে পারে।