বেইলি রোডে ভবনে যেভাবে আগুনের সূত্রপাত
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁ থেকে হয়নি। নিচের একটি দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল।
এছাড়া, ভবনটির একমাত্র সিঁড়ির মুখেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ছিল বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার। আগুন সেই সিলিন্ডারগুলোতে লেগে গেলে মুহূর্তেই তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
আর একমাত্র সিঁড়ির মুখে আগুন লাগার ফলে ওপর থেকে কেউ নামতে পারেননি, আটকা পড়েছিলেন ভবনে থাকা সবাই।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ভবনটিতে একাধিক রেস্তোরাঁ থাকায় সেগুলোর প্রায় সবকটিতেই গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। যে কারণে মুহূর্তেই আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায় ও তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল এবং কোনো জরুরি বহির্গমন অর্থাৎ আগুন লাগলে জরুরি ভিত্তিতে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া ভবনটিতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত ছিল না।
একই তথ্য দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, এই ধরনের বাণিজ্যিক ভবনে শুধু একটিমাত্র সিঁড়ি থাকা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অগ্নি নিরাপত্তা প্রোটোকলের একটি বড় ত্রুটি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনজুড়ে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েকজন। মৃত্যু সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবনটিতে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ ছাড়াও, স্যামসাংয়ের শোরুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইলিন, খানাস ও পিৎজা ইন রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনাস্থলকে ‘ক্রাইম সিন’ ঘোষণা দিয়ে ভবনটির সামনে হলুদ ফিতা আটকে দেন।
শুক্রবার (১ মার্চ) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের দেখতে যাওয়ার পর র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ আলম বলেন, নিচের একটি ছোট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। তবে পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল। দুটি লিফট ছিল। আগুন লাগার পর কেউ নামতে পারেনি। কেউ বলছিলেন ওপরে আগুন লেগেছে, কেউ বলেছেন নিচে আগুন লেগেছে। ফলে মানুষ কোনদিকে যাবে তা বুঝতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এখনো তদন্ত শুরু করিনি। কারা সিঁড়িতে সিলিন্ডার রেখেছে তা বের করা হবে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারাও রিপোর্ট দেবে। একটি ভবন তৈরির ক্ষেত্রে রাজউকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সরকার দায়িত্ব দিলে আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করব।
‘প্রকৃত ঘটনার খোঁজ নিয়ে আমরা ইন্টেলিজেন্স ইউংয়ের সহায়তায় একটি রিপোর্ট তৈরি করব’ যোগ করেন র্যাব প্রধান।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় মামলা হবে। বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ রাজউকের পরিকল্পনা অনুসরণ করেছে কি না এবং প্রয়োজনীয় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ছিল কি না এটি তদন্ত করে দেখা হবে।