বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেল খালে-বিলে, জানে না পরিবেশ অধিদপ্তর
ঢাকা জার্নাল: বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা এলাকায় সেতু ভেঙে তেলবাহি ওয়াগন খালে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ওয়াগন থেকে বিপুল পরিমান ফার্নেস অয়েল বোয়ালখালী খাল ও সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
ফার্নেস অয়েলের টক্সিক পানির সঙ্গে মিশে খালের খাদ্যচক্র নষ্ট, অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি করে বাস্তুতন্ত্র নষ্টসহ মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যাদের তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে বোয়ালখালীর বেঙ্গুরা ও পটিয়ার ধলঘাট এলাকার মাঝামাঝি রেলওয়ের ২৪নং সেতু ভেঙ্গে ইঞ্জিনসহ তিনটি তেলবাহি ওয়াগন খালে পড়ে যায়। এরমধ্যে দুইটি ওয়াগন বোয়ালখালী খালে ডুবে গেছে।
দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি তেলগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
ওয়াগনগুলোর খোলা মুখ দিয়ে ফার্নেস অয়েল সংলগ্ন খালে ছড়িয়ে পড়ে। হিসেব অনুযায়ী, দুর্ঘটনা কবলিত দুইটি ওয়াগনে প্রায় ৫২ হাজারের অধিক লিটার ফার্নেস অয়েল ছিল, যার অধিকাংশই গড়িয়ে বোয়ালখালী খাল হয়ে কর্ণফুলী ও আশপাশের আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, বোয়ালখালী খালটি কর্ণফুলী নদীর শাখা খাল।
বোয়ালখালী খাল যেহেতু জোয়ার-ভাটার খাল সেহেতু ফার্নেস অয়েল পার্শ্ববর্তী অন্যখালসহ কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়বে। এর ফলে কর্ণফুলী তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“ফার্নেস অয়েলের টক্সিক পানির সঙ্গে মিশে নদীর খাদ্যচক্র নষ্ট, অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি করে বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করবে। টক্সিক এক ধরণের বিষক্রিয়া। এর ফলে প্রাণি ও মাছ মারা যাবে। আবার এসব প্রাণি ও মাছ ভক্ষণ করতে এসে বিভিন্ন পাখিও মারা যাবে। এছাড়া বোয়ালখালী খালের আশেপাশের ধানি জমির মাটিগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হবে। আগামী কয়েকবছর এসব জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হবে না,” বলেন তিনি।
ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিয়েছে। বিভিন্ন সময় ওয়াগন দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই তেলবাহী ওয়াগন দুর্ঘটনা রোধে কি করা যায় বা দুর্ঘটনা হলে প্রাকৃতিক বিপরর্যয়রোধে তাৎক্ষণিক কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে ভেবে দেখা উচিত। ’
অতিসত্ত্বর নদীর পানিতে ভেসে থাকা ফার্নেস অয়েলের স্তর সরিয়ে ফেলা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন,‘তেলবাহী ওয়াগন দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ’
ইতিমধ্যে দায়িত্ব অবহেলার দায়ে দুই প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা জার্নাল, জুন ১৯, ২০১৫।