Leadসংবাদ শিরোনাম

বিজয়ের আনন্দে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্বরেকর্ড

Jatiya-Sangit-Program.16.12.2013.OK_.02-300x172ঢাকা জার্নাল: আরও একটি বিশ্বরেকর্ড করল বাংলাদেশ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বাধিক মানুষ একসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে এ রেকর্ড করে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। বিশ্বে এত মানুষের একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ঘটনা আর নেই। সোমবার মহান বিজয় দিবসে এ রেকর্ড করে বাংলাদেশ।

একই দিনে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সর্বাধিক মানুষের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা তৈরি করে বিশ্বরেকর্ড করে বাংলাদেশ। এ মানব পতাকা তৈরিতে অংশগ্রহণ করে ২৭ হাজার ১১৭ জন মানুষ।

সোহরাওয়ার্দীতে উদ্যানে যেন বিজয় এসে আবার ধরা দিয়েছে। বিজয়ের দিনে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ যেন এ বিজয়ের সাক্ষী হয়ে থাকার জন্য দল বেঁধে এসেছিলেন সোমবার সকাল থেকেই।

বিজয় দিবস পালনের লক্ষ্যে জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয় দিবসের উৎসব। বিজয় ২০১৩ উদযাপন কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ ও বিজয় ৪ : ৩১ মঞ্চ যৌথভাবে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিজয়ের সূর্যোদয়, বাংলাদেশ বিশ্বময়।’ সোমবার বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় মঞ্চের সামনে পরিকল্পনামন্ত্রী ও এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ কে খন্দকার বীর উত্তম, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা জাতীয় সংগীত গেয়ে বিজয় উৎসব শুরু করেন। পরে বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এ কে খন্দকার মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন দলীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি পরিবেশন করে। পরে এক একে সারাদিনই ছায়ানট, মিউজিক কলেজ, ভাওয়াইয়া সঙ্গীত দল, সুরের ধারা, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, নজরুল শিল্পী সংস্থাসহ আরো অনেক সংগঠন তাদের পরিবেশনা চালিয়ে যায়।

সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অটুট রাখার শপথ নেয় নতুন প্রজন্ম। ছবি : কাউসারুজ্জামান রনি
সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অটুট রাখার শপথ নেয় নতুন প্রজন্ম। ছবি : কাউসারুজ্জামান রনি
এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন মাত্রায় উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর এবারই প্রথমেএকাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে বুদ্ধিজীবী দিবসও পালন হয় এমন এক সন্তুষ্টি নিয়ে আর আগামীর প্রত্যাশার নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া মেনে বাকি যুদ্ধাপরাধীদের মামলার রায়গুলোও কার্যকর করা হোক। এতে অন্তত যুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিত মানুষের আত্মা শান্তি পাবে।’

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘জামায়াত-শিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবেই চিন্হিত করা উচিত। কাদের মোল্লার ফাঁসির মাধ্যমে এবারের বিজয় দিবস ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘একাত্তরের শহীদদের আত্মা এখনো পুরোপুরি শান্তি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে সমূলে বিনাশ করতে পারলে তারা পুরোপুরি শান্তি পাবে।’বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘জামায়াতের এতদিন ধরে পুঞ্জিভূত প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার মৌলবাদী অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে হবে। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হবে।’

এ ছাড়া বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রেডক্রস ও বাঁধনের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়।
বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট সেই কাঙ্খিত ক্ষণে লাখ সমবেত কন্ঠে গেয়ে ওঠে জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই দিনেই রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকবাহিনী।

একাত্তরের বীর মুক্তিযুদ্ধা,গনজাগরণ মঞ্চের কর্মী,বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীসহ সকলে এক কাতারে দাড়িয়ে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগবে তারুণ্য” এমন শপথের জন্য মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার সকলের প্রতি আহবান জানান। শপথের জন্য উপস্থিত জনতা উচ্চারণ করে,‘‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অগণিত শহীদ ও বীরের নামে,সকল নির্যাতিত ভাই ও বোনের নামে আমরা শপথ নিচ্ছি।

অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের হাতে দেশের পতাকা তুলে দেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিজয় দিবস উপলক্ষে উদ্যানের টিএসসি প্রান্তে বসেছে সার্কাস, নাগরদোলা, রাউন্ড রাইড। সন্ধ্যায় শুরু হয় ‘কনসার্ট ফর ফ্রিডম’ শিরোনামের সংগীতানুষ্ঠান। এতে দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা ও সংগীতদলগুলো অংশ নেয়। রাতে এর মাধ্যমেই শেষ হয় এ বিজয় উৎসব। এর আগে সেখানে আকষর্ণীয় আতশবাজি উৎসব পালন করা হয়। আকাশে উড়েছে আগুনের ফুলকি। সবাই তাকিয়ে ছিল সেদিকে। এই আগুনের ফুলকির মতো তাদের মাঝে যে চেতনা এক হয়ে ধরা দিয়েছে তা আগামীর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করবে।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.