বাংলাদেশের ক্রিকেটের হারের মূলে কি ‘ভাত খাওয়া’?

জুন ৩, ২০২৪
সুভাশিষ বড়ুয়া সুমন

সুভাশিষ বড়ুয়া সুমন 

১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউডের ‘শোলে’ ছবির কিছু দৃশ্য মনে পড়ছে খুব। জয় (অমিতাভ) যখন ভীরুর  (ধর্মেন্দ্র) সাথে বসন্তীর (হেমা মালিনী) বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান, পাত্রের নানা ধরনের গুণের কথা বলতে গিয়ে বলেন ‘ছেলে একটু জুয়া খেলে যদি বন্ধুরা টেনে বসিয়ে দেয়, বা একটু নর্তকির বাড়ি আশা যাওয়া আছে যদি নেশা পানি করে, নইলে ছেলে খুব ভালো’। প্রায় কাছাকাছি অনেক কৌতূক বাংলায়ও রয়েছে। বাংলাদেশ টি -২০ বিশ্বকাপ দলের কথা লিখতে গিয়ে এই কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

একটা দল,বিশ্বকাপ দল, ১৭ কোটি মানুষের আবেগ, লাল সবুজের সম্মান, ৫ বছরে শিশু থেকে শতবর্ষী বৃদ্ধের স্বপ্ন, এমন নাম জানা হাজারো গল্প শুধু মাত্র ক্রিকেট নিয়ে,আমাদের পতাকা বহনের কাণ্ডারি তাদের কাছে আর কী চাওয়ার আছে? আমরা জানি টি-২০ তে আমাদের সীমাবদ্ধতা, আমরা জানি আমাদের দৌড় দ্বিতীয় রাউন্ড,বড়জোর সেমিফাইনাল। এর চেয়ে বেশিকিছু চাওয়া বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি। তারপরেও আবেগী বাঙালি স্বপ্ন দেখে, বাঁচতে শিখে, একটা খেলার জন্য এক হয়, সব ভেদাভেদ ভুলে লাল সবুজের জন্য বুক চিতিয়ে,গলা ফাটিয়ে উল্লাস করে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। এ যেন একটাই কথা বলে ‘সাহস নামের একটি দেশ শাবাশ বাংলাদেশ’।

এবার আসি মাঠের কথায়,সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা? এই প্রবাদ পুরোই মিলে যায় বাংলাদেশ টিমের সাথে। এতো বড়ো একটা টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে ‘ঐচ্ছিক অনুশীলন’ ব্যাপারটা কি হজম যোগ্য? আবার পুঁচকে (খেলার অভিজ্ঞতার অর্থে) আমেরিকার কাছে ইজ্জতের ফালুদা করা সিরিজ পরাজয় কি ইঙ্গিত করে না আমরা কতো কাজের কাজী?

দেখেন ভারতের সাথে ম্যাচের আগেরদিন পুরো টিম অনুশীলন করেনি, নেট বলার পর্যাপ্ত নেই, ভেজা টার্ফে বোলারদের বোলিং প্র্যাকটিস, কোচদের কেমন একটা গা ছাড়া ভাব, মাঝে মাঝে তাদের আচরণ দেখলে মনে হয় ‘নিয়োগ বাণিজ্যের’ মাধ্যমে চাকরি প্রাপ্ত যোগ্যতাহীন আত্মীয় স্বজন আমাদের কোচ!

এবার আসি এক বুড়ো জগন্নাথ রিয়াদ বাদে কার খেলা বা বডি ল্যাংগুয়েজ বলেছে তারা একটা বড় দলের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে,শট সিলেকশন, এলো মেলো খেই হারানো বোলিং, টিম হ্যান্ডেল, উইকেট উল্লাস সব কিছুতেই একটা জং ধরা মেশিনের মতো আচরণ। আজব এক দল আমরা টি-২০ খেলি টেষ্টের মতো,টেস্ট খেলি টি-২০ মতো,মাথায়ই আসেনা কেনই বা তাদের এমন খেলার ধরণ?

শট তর্ক চলছে ,আমাদের খেলোয়াড়দের সমস্যা কোথায়? স্কিল নাকি মাইন্ড সেট? স্টুয়ার্ট’ল বলছেন ২৫ বছরেও এই দলের উন্নতি হয়নি, ভাত খেয়ে খেয়ে এরা শেষ। মোটা বেতনের কোচ মহাশয় কী করছেন তিনিই জানেন, তার ক্রিকেটীয় স্কিল যাই হোক দলীয় রাজনীতি কিন্তু ‘দাবা খেলাকেও হার মানায়, কিন্তু কেন? কোথায় আমাদের সীমাবদ্ধতা,কোথায় আমাদের সংকোচ? দলের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে সমস্যা জলের মতো স্বচ্ছ, জানা যায় তারপরেও পরের বিশ্বকাপের স্বপ্ন আর কতোদিন? অনেকটা গাধার মুখের সামনে মূলা ঝোলানোর মতো।

হাজার কোটি টাকার বোর্ড তাদের স্ব-গৌরব নেতৃত্ব,সবকিছু বুঝলাম কিন্তু পারফরম্যান্স? অর্থনীতির হিসেব অনুযায়ী এই মোটা অংকের টাকা বোর্ডের কাছে গেছে সাধারণ মানুষের সাথে বাণিজ্য করেই,(এ নিয়ে আরেকদিন লিখবো), কিন্তু এই বাণিজ্য তো খেলার উন্নতির চেয়ে মানুষের আবেগ পুঁজি করে অট্টালিকা বানানোই। তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেটের অবকাঠামোগত নড়বড়ে অবস্থা একজন ক্রিকেট বোদ্ধার যেমন জানা,পাড়ার গলিতে ক্রিকেট খেলা পুঁচকে ছেলেরও জানা।

অবস্থা এমন ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা’ সমস্যার মূলে কে বলবে কী সেকথা? তুবুও মানুষ আশায় বুক বাঁধে,সাহস নিয়ে টিভির সামনে বসেন, মাঠে যান টাইগার টাইগার করে চিৎকার করতে। তাই বলতে হয় ‘সাহস নামের একটি দেশ শাবাশ বাংলাদেশ’।

লেখক: ক্রিকেট সমর্থক