পদ্মাসেতুর জন্য বাজেটে ৬৮৫২ কোটি টাকা
ঢাকা জার্নাল: পদ্মাসেতু প্রকল্পে এবারের বাজেটে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঋণ জালিয়াতির জন্য সমালোচিত হলমার্ককে ঋণ দেওয়ার পক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন তিনি। কঠোর সমালোচনাও করলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
শনিবার সচিবালয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনাকালে সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় থাকছে ৬০ দশমিক ৮ কোটি ডলার বা ৪৮৬০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
ড. ইউনূস গ্রামীণব্যাংক দখল করে আছেন এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তার (ড. ইউনূস) রীতিমতো ইগো প্রবলেম আছে। একই সময় তিনি কঠোর সমালোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদেরও।
আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবীণ সাংবাদিক রাহাত খান, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মুনয়েম ও বিডিনিউজ-এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী প্রমুখ অংশ নেন। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট হিসেবে আগামী বাজেটে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ও বাস্তবায়নের চিত্র, আসন্ন বাজেট, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, হরতাল, কেন মানুষ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে নির্মাণ, মেট্রোরেল, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনির অনিয়ম, ডিজিটাল বাংলাদেশ, দুর্নীতি, সুশাসন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের অবস্থান এবং দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। প্রায় দুঘণ্টা ধরে চলা এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব ব্যাপারে অনেকটা খোলামেলা কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রায় সবগুলো প্রশ্নের এক এক করে জবাব দেন তিনি।
পদ্মাসেতু প্রসঙ্গ
মুহিত বলেন, চার বছরের প্রকল্প ধরে আমরা পদ্মাসেতু প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে এক হাজার পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর আসছে অর্থ বছরের জন্য ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় থাকছে ৬০ দশমিক ৮ কোটি ডলার বা ৪৮৬০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
হলমার্কের পক্ষে অর্থমন্ত্রীর সাফাই
আলোচনা সভায় অর্থ জালিয়াতি সমালোচিত হলমার্কের পক্ষে সাফাই গাইলেন মুহিত।
তিনি বলেন, হলমার্কের টাকা উদ্ধারের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করতে দিতে হবে। বন্ধ করে রাখলে কোন সমাধান হবে না। এর ৪০ হাজার লোক বেকার। ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এগুলো চলতে দিলে তা থেকে আয় হবে। এগুলো ব্যবহার করা উচিত। এগুলো বন্ধ থাকলে আয় হবে না।
এসময় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল জানতে চান হলমার্কের প্রতি মহানূভবতা দেখাচ্ছে কিনা সরকার। উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “হলমার্ক-এর প্রতি কোনো মহানুভবতা দেখানো হয়নি। হলমার্কের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে যে, তাদের কারখানাসমূহ বন্ধ থাকায় ৪০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে এবং ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে হলমার্কের কারখানাগুলো সচল রেখে অর্থ আদায়ের জন্য আমি সোনালী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমার মতে, বড় কোনো বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া ভাল কোনো ব্রিজনেস প্র্যাকটিস নয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আর্থিক অপরাধের বিচার করা খুবই কঠিন। বাংলাদেশে এবারই প্রথম এ ধরনের বিচার হচ্ছে। এর আগে এ ধরনের কোনো বিচার হয়নি। তারপরও যতটুকু হচ্ছে, সেটা একেবারে খারাপ নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় শুধু হলমার্ক নয়, একই সঙ্গে তাদের যারা ফেভার করেছেন সেইসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি দুদক-কে বলেছিলাম। তবে দুদক একটি সহনীয়ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে।
হলমার্কের মতো ডেসটিনি কে তার কার্যক্রম শুরু করতে দেওয়া যায় কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস: অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটিকে চালাতে দিচ্ছেন না। তিনি এটিকে টেকসই করতে দিচ্ছেন না। ব্যাংকের এমডি নিয়োগও করতে দিচ্ছেন না। উনি এটিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চান। তিনি এটিকে শেষ করতে চাইছেন।”
মন্ত্রী বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলে যাওয়ার পর এটি ভালো চলছে। কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংককে নিজের সম্পদ মনে করেন, উনার বিরুদ্ধে এটি আমার অভিযোগ। উনার রীতিমতো ইগো প্রবলেম আছে।”
শুক্র ও শনিবার ব্যাংক-বীমা চলবে: এক পর্যায়ে সাংবাদিক রাহাত খান জানতে চান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন যে পর্যায়ে যাচ্ছে তাতে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে সেটি মনে রাখা হয়েছে কিনা। উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমরা সেটি মনে রেখেছি। তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের হরতাল রাষ্ট্র বিরোধী। এটি রাজনৈতিক নয়। তবে যে সপ্তাহগুলো হরতাল থাকবে সে সপ্তাহগুলোতে শুক্র ও শনিবার ব্যাংক, বীমা চালু রাখা হবে। পরিবহন খাত যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেন্ডার বাজেটের পরিধি বাড়ছে
সাংবাদিক ফাহিম মুনয়েমের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের বাজেটে পদ্মাসেতু, রেলওয়ে খাত, রেলপথে ট্রানজিট, বন্দর উন্নয়ন, একটি জেলায় আলাদা বাজেট প্রদান ইত্যদি বিষয় গুরুত্ব পাবে। এছাড়া ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট দেওয়া হবে। যা চলতি বাজেটে ছিলো ২৫টি মন্ত্রণালয়ের জন্য।
বিদ্যুৎ খাত
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়, দারিদ্র ও অসাম্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ডিজিটাল বাংলাদেশ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক পুস্তিকা বাজেটে প্রকাশ করা হবে। সেখানে বর্তমান সরকারের মেয়াদের অর্জনগুলো তুলে ধরা হবে। আর যা অজর্ন করতে পারিনি তাও বলা হবে।”
আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “বাজেটে বিদ্যুৎ খাত সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হবে। বর্তমান সরকারের আমলে মোট কতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কতগুলো স্থাপিত হয়েছে, কতগুলো উৎপাদন শুরু করেছে, বাকিগুলো কবে উৎপাদনে যাবে এবং মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি ঘন্টায় কত তার তথ্য থাকবে। তিনি বলেন, “আগামী ২০১৭ সাল নাগাদ দেশে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না।”
শেয়ার বাজার
শেয়ার বাজারে কেলেংকারির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাক্ষীর অভাবে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।
এক পর্যায়ে ইব্রাহীম খালেদের সমালোচনা করে মুহিত বলেন, তার তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা আমার নেই। কারণ সাক্ষী নেই। সাক্ষী নেই বলেই তিনি এ বিষয়ে শুধু অনুমান করেছেন। তারপরও সরকার এবং সরকারের বাইরে এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনে যে চারজনের কথা বলা হয়েছে, তাদের বিষয়ে আমাকে সাক্ষী পেতে হবে তো। সাক্ষী না পেলে আমি কীভাবে এগুবো?”
“খালেদ সাহেব এখন প্রচারের জন্য নানা কিছু করছেন,” বলেন অর্থমন্ত্রী।
ঢাকা জার্নাল, ৩০ মার্চ, ২০১৩।