শীর্ষ সংবাদ

নিখোঁজ মানুষের সন্ধানে ছবি হাতে নিয়ে ঘুরছেন স্বজনেরা

130424122554_bangla_savar_collapse_512x288_focusbanglaঢাকা জার্নাল: রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আর কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা কার্যত ছেড়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনও কয়েকশ মানুষের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

কোন কোন হিসাবে নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা চারশোর মতো হবে। ফলে ভবন ধসের পর  ৭ম দিনে সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় তেমন না থাকলেও নিখোঁজ আত্মীয়দের খোঁজে আসা কয়েকশো মানুষ সেনাবাহিনীর বাধা সত্বেও এলাকা ছাড়েন নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভারী ক্রেন দিয়ে ভেঙে পড়া ভবনটির পিলার সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।

ধ্বংসস্তূপের চারপাশে ছড়ানো রাসায়নিক পদার্থের গন্ধের ভেতর থেকেও নাকে এসে লাগছে গলে পচে যাওয়া মরদেহের গন্ধ।

সামরিক বাহিনী গত ক’দিন ধরেই ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে আশপাশের এলাকা। আপনজনের ছবি হাতে কখনো হাসপাতালে, কখনো স্কুলের মাঠে আবার ধসে পড়া ভবনের আশেপাশে ঘুরছেন স্বজনেরা ওই ব্যারিকেড তবুও যাদের ফেরাতে পারেনি তারা হলেন নিখোঁজদের আপনজন।

কয়েকশো মানুষ এখনো নিখোঁজ স্বজনদের ছবি হাতে শেষ আশায় ধ্বংসস্তূপের আশপাশে অপেক্ষা করছেন। ভিড় করছেন ধংসস্তুপের আশেপাশে, পাশের এনাম হাসপাতালে অথবা অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে মাঠে যার বারান্দায় সারি সারি করে নিহতদের মৃতদেহ রাখা হয়েছে।

ধসে পড়া ভবনটির কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তাদের অনেকেই। তাদের একজন মোঃ আবু সদ্দি আশংকা করছেন, ভারী যন্ত্রের ব্যবহার হয়তো এখন তার স্বজনের শেষ চিহ্নটুকুও গুড়িয়ে দেবে।

তিনি বলেন, “আমার ভাগ্নিকে যত জায়গায় সম্ভব খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। এখন বুলডোজার দিয়ে সব লাশ হয়তো ধ্বংসস্তূপের সাথে গুড়িয়ে দেবে। মৃতদেহের খোঁজ করতে আমরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঢুকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”

আবু সদ্দির মতো অনেকেই এখন অন্তত মরদেহের খোঁজ মেলে কিনা তার অপেক্ষায় আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও চারশোর মতো মানুষ নিখোঁজ আছে। আর তাদের খোঁজ না মিললে নিখোঁজদের তালিকায় তাদের নাম উঠবে।

ধ্বংসস্তূপের উল্টো দিকেই পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখানে নিখোঁজদের সম্পর্কে ধারণা চাইলে তারা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যেতে বললেন।

সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও একটা ভাসা ভাসা ধারণা পাওয়া গেলো। তারা জানিয়েছেন, ৩৯০ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে আর ২৪৭৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

গার্মেন্ট মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ থেকে ঐ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেদিন আনুমানিক ৩২শ শ্রমিক কাজে গিয়েছিলেন।

সে হিসেবে হয়ত ৪০০ জনের মতো শ্রমিক নিখোঁজ থাকতে পারেন বলে আপাতত ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ঐ ভবনের একটি গার্মেন্টসর কারখানাতেই কাজ করতেন এমন একজন শেফালি জানিয়েছেন, সবাই সেদিন মালিকদের ভয়ে বা বেতন পাওয়ার আশায় কাজে গিয়েছিলেন।

শেফালি বলেন, “আমি সেদিন বিল্ডিং ভাঙার পরপরই বের হতে পেরেছিলাম কিন্তু আমার দুই বোনের এখনো কোনো খোঁজ নাই।”

শেফালিসহ আরও অপেক্ষমাণ স্বজনদের বেশিক্ষণ এসব কথা বলার সুযোগ জোটেনি।

প্রায় এক সপ্তাহ পর, স্বজনেরা এখন চাইছেন অন্তত মরদেহটা যেন খুঁজে পাওয়া যায়।

তাদেরকে বাঁশি বাজিয়ে, ব্যারিকেডের বাইরে ঠেলে সরিয়ে দেয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বজনদের খোঁজে তাদের অনেকেই এখনো ছুটে যাচ্ছেন আশপাশের হাসপাতাল গুলোতে।

সেরকম একজন গোলাম মোস্তফা মরদেহ সনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ টেস্টের দাবি জানান।

এদিকে এনাম হাসপাতালের বাইরের দেয়াল আর মূল ফটকে সেটে দেয়া আছে নিখোঁজ মানুষের অসংখ্য ছবি। সেখানে আসা স্বজনদের এখন একমাত্র দাবি “আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ চাইনা, চাই তাদের মরদেহ।”

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.