নাগরিক সমাজের ৫ দফা দাবি
ঢাকা জার্নাল: ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিচার রায় ঘোষণা কার্যকর করাসহ ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে শনিবার জাতীয় সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
একই সঙ্গে দাবি আদায়ে নাগরিক সমাবেশসহ ভবিষ্যত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে নাগরিক সমাজের জাতীয় সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা ডা. সারওয়ার আলী জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে-
১) জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করো: জামায়াত-শিবির তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা ধর্মের অপব্যবহারকারী। সংবিধান বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন। সুতরাং ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
২) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করো: বর্তমানে বিচারাধীন সব শীর্ষ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ ত্বরান্বিত করে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করতে হবে।
৩) সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিহত করো, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াও: মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে, সব মন্দির পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য শুধু সরকারই নয় সমগ্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
৪) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নাও, মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখো: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ৭২’র সংবিধানের মূলনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এই ভাবাদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা ছাড়া আধুনিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই, ধর্মানুভূতিকে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে মুক্ত চিন্তার পথ রুদ্ধ করা যাবে না।
৫) তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করতে হবে, নারী অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে: ধর্মান্ধ শক্তি ১৩ দফা দাবির মাধ্যমে দেশকে মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন করাতে উদ্ধত হয়েছে। সুতরাং ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর সব তৎপতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই অপশক্তিকে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে তুষ্ট কিংবা লালন করা যাবে না।
দাবি আদায়ে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে; প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি, বিভাগীয় সদরে নাগরিক সমাবেশ, আলোচনা ও মতবিনিময় সভা এবং সব নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ।
সম্মেলনে নাগরিকেরা যা বললেন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মানলে বাংলাদেশ ১৩শ বছর পিছিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, “ব্যভিচারী এরশাদ হেফাজতে ইসলামকে পানি খাইয়েছেন। আর বিএনপির সিনিয়র নেতারা গেছেন মঞ্চে। এই সমাবেশ শেষে তারা শাহবাগে হামলা করেছিলেন। আমি সেখানে ছিলাম। দেখেছি তরুণদের সাহস। তাদের কাউকে ভয় পেতে দেখিনি। তারা হামলা প্রতিহত করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের একটি তরুণ সমাজ রয়েছে, যা আর কারো নেই; যারা অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই বিশাল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা ’৭১ সালে ভয় পাইনি। এখনও ভয় পাবো না। আমাদের পরিষ্কার বলতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”
জাতীয় সম্মেলনে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘জামায়াত ও হেফাজতপ্রীতি থাকলে বিএনপি ৬ মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে’।
বিএনপি প্রধানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমরা চাই, একটি যৌক্তিক ডানপন্থি দল হিসেবে বিএনপি টিকে থাকুক। জামায়াত-হেফাজতের বিএনপি হয়ে যাবেন না। জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়লে তারা আপনাদের খেয়ে ফেলবে। আমরা চাই না, আপনারা বিলীন হয়ে যান।”
জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়ে শাহদীন মালিক বলেন, “জামায়াত-শিবির ৭১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নৃশংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। দুনিয়ার কোথাও এমন দলকে স্থান দেওয়া হয় না। আমরা কেন তাদের স্থান দিয়েছি, ভেবে দেখতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, “জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে নাগরিক সমাজের মতো আওয়ামী লীগ, বিএনপির সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি বলেন, “একাত্তরে বাংলাদেশ যাতে ফিরে যেতে না পারে, এই প্রশ্নে কোনো দোদুল্যমান আচরণ সহ্য করা যাবে না। এ প্রশ্নে কোনো আপস সেই।”
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, শাহবাগের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনকে বার বার বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
এ জন্য তিনি মাহমুদুর রহমানকে দায়ী করে বলেন, “দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এই বিতর্কের নায়ক।”
ডা. ইমরান বলেন, “দৈনিক আমার দেশ-এ মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছেন। আমরা আগে থেকেই তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তাকে আগেই গ্রেফতার করা হলে এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না।”
এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে ডা. ইমরান বলেন, “শাহবাগের আন্দোলনে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সমর্থন দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। দেশের সব মা, সব বাবাদের নিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়বো আমরা।”