থমকে আছে রমনায় বোমা হামলার মামলা
ঢাকা জার্নাল: এক যুগেও রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বোমা হামলার বিচার হয়নি৷ বিচার পাননি নিহতদের পরিবার৷ আর এখনো অনেকে পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করছেন৷ তারা বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছেন৷
২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল, বাংলা ১৪০৮ সনের ১লা বৈশাখ রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন৷ আর আহত হয় ২০ জন৷ বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে শুরু হয় শোকের মাতম৷ সকালের কান্নায় বেদনার্ত হয়ে ওঠে পুরো দেশ৷ কিন্তু সময়ে সব কিছু যেন ফিকে হয়ে আসে৷ অনেকেই ভুলে যায় নৃশংসতার কথা, ভয়াবহতার কথা৷ ভুলে যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের৷ আর যারা পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের খোঁজই বা কে রাখে৷
আর এ কারণেই ১২ বছরেও সেই বোমা হামলার ঘটনার বিচার শেষ হয়নি৷ কবে শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না৷
রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় মোট দুটি মামলা হয়েছিল৷ একটি বিস্ফোরক আইনে, আর অন্যটি হত্যা মামলা৷ কিন্তু শুরু থেকেই এই মামলা নিয়ে চলে নানা টানাহ্যাঁচড়া৷ মামলার আলামত গায়েবেরও অভিযোগ ওঠে৷ মামলা দায়েরের ৭ বছর পর ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে দুটি মামলায়ই চার্জশিট দেয়া হয়৷ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়৷ আর আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০০৯ সালের এপ্রিলে৷
মামলার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, এই মামলার আসামিরা কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা এবং ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলাসহ আরো অনেক মামলার আসামি৷ ফলে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পড়লেও প্রায় সময়ই অন্য মামলায় তারিখ থাকায় তাদের হাজির করা যায়না৷ ফলে দিনের পর দিন মামলা পিছিয়ে যাচ্ছে৷ সাক্ষীদের ঠিকমত হাজির করা হয়না৷
তিনি জানান তাই মামলার বিচার কাজ বলতে গেলে থমকে আছে৷
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম জাহিদ হোসেন জানান বিষ্ফোরক আইনের মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ বেশ কিছু দূর এগোলেও এখন থমকে আছে৷
তিনি জানান এই মামলার বিচার কাজ ১৩৫ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় পরবর্তী করণীয় নিয়ে তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা চেয়েছেন৷ কিন্তু অনেক দিন হলো কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেনা উচ্চ আদালত – যা তাদের হতাশ করেছে৷
তবে হত্যা মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ই এপ্রিল সোমবার৷
বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানান যদি পরবর্তী হাজিরার দিনগুলোতে আসামি এবং সাক্ষীদের ঠিকমতো হাজির করা যায় তাহলে আড়াই তিন মাসের মধ্যে মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার কথা৷ তবে সব কিছু নির্ভর করছে আসামি এবং সাক্ষীদের নির্ধারিত তারিখে নিয়মিত আদালতে হাজিরার ওপর৷
এদিকে এই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটোও হতাশা প্রকাশ করেন৷ তাঁর দাবি ১৪ আসামির মধ্যে আটক কয়েকজন আছেন যারা বিচারে নির্দোষ প্রমাণ হবেন৷ অথচ তারা ১২ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি আছেন৷
১৪ আসামির বিরুদ্ধেই আদালত অভিযোগ গঠন করলেও সব আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি৷ হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ৮ জন এখন কারাগারে আছেন৷ জামিনে আছেন একজন৷ আর ৫ জন এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷