ঢাকা

ছাত্রলীগ নেতা সাংবাদিক পেটালেন

nazrul_intro

ঢাকা জার্নাল : ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা এবার পেটালেন সাংবাদিককে। বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজ ক্যান্টিনে শেখ আজিজ নামের ঐ ছাত্রলীগ নেতার আক্রমনের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক নাজমুল সাঈদ। শেখ আজিজ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অসংখ্য অভিযোগ আছে।

আজিজ এবং তার সহযোগিদের আক্রমনের শিকার হওয়া নাজমুল দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সহ-সম্পাদক এবং ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ কর্মীদের এহেন আক্রমনে নাজমুল গুরুতর আহত হন।তিনি প্রাথমিকভাবে গণস্বাস্থ্য মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে মাষ্টার্স ভর্তি নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। অনেক সময় তাদের জোর করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে।

ক্ষমতার পালাবদলে সরকার পরিবর্তন হলেও থেমে থাকেনা ভর্তি বাণিজ্য। সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্ষমতায় গেলে ভর্তি বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকার পাহাড় গড়েন।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ এ বছর প্রতি বিভাগ থেকে মোট আসনের ওপর শতকরা ২০% আসন নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। ভর্তিবাণিজ্যের সাথে যুক্ত আছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীরাও। বিভিন্ন কলেজ থেকে আসা ভাল ফলাফলের শিক্ষার্থীদের দেশসেরা এ কলেজটিতে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়।

অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের নেতারা প্রতিটি ভর্তির জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। অনেকে বলছেন, এটা তাদের মৌসুমী ব্যবসাও বটে।

গত মঙ্গলবার সকালে প্রাণী বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হতে আসেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মহসিন আলী। মহসিন আলী নাজমুলের বড় ভাই। প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সামনে থেকে তার কাছ থেকে একাডেমিক কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ নেতা আজিজ। এরপর মহসীনকে জোর করে রাজনৈতিক প্রভাবে ভর্তি করিয়ে দিতে ৩ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার মহসীন কলেজে নাজমুলকে নিয়ে আসলেও তার কাগজগুলো দেননি, উল্টা হুমকি দেন যে ৩ হাজার টাকা না দিলে তিনি কাগজপত্র দিবেন না। পরবর্তিতে দুপুর ২টায় নাজমুল ও মহসীনকে কলেজ ক্যান্টিনে দেখা করতে বলে তার সহযোগিরাসহ ব্যাপক প্রহার করেন।

ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে কলেজের আশেপাশের মিষ্টির দোকান, টেইলার্স থেকে শুরু করে সর্বত্র চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।

নাজমুল জানান, “আজিজসহ ছাত্রলীগকর্মীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে প্রহার করেন। চিকিৎসা নেয়ার পর বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন।”

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা বলেন, “ আমার সাফ কথা টাকা লাগবে। ভর্তি বাণিজ্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ভর্তির টাকা না দিলে কাগজ দিব না। ভর্তি হতে হলে আমার মাধ্যমেই ভর্তি হতে হবে।”

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পল্লব হোসাইন বলেন, “ আমি ব্যাপারটি ক্লিয়ার জানি না। ব্যাপারটি নিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্ববায়ক, বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিহাবুজ্জামান সিহাব বলেন, “আমি এখন তো কলেজে নাই। তাই এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। আজিজ যদি এমন কাজ করে থাকে তবে সে অন্যায় করেছে।”

সাংবাদিক আহত এবং ভর্তি বাণিজ্যের ব্যাপারে তিব্র নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়েছে ‘ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের এই নেতাকে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.