আন্তর্জাতিক

চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করলো ভারতের চন্দ্রযান-৩

ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে ভারত প্রথমবার চাঁদে সফলভাবে নভোযান পাঠানোর মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করলো। চাঁদে নভোযান পাঠানো চতুর্থ দেশ এখন ভারত। চন্দ্রযানের সফল অবতরণের জন্য ভারতের সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল।

ভারতের স্থানীয় সময় ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করে। ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া ৫টা ৪৫ মিনিটে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। অবতরণ প্রক্রিয়া শুরুর পর বিক্রমের গতি ১,১৫০ মিটার প্রতি সেকেন্ডে কমিয়ে আনা হয়। চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সফলভাবে অবতরণের পর ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, টিম চন্দ্রযানকে, বিজ্ঞানীদের আমার শুভেচ্ছা। তারা এই মুহূর্তটির জন্য বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেছেন। ১৪০ কোটি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা। ভারতের উদয়মান ভাগ্যের আহ্বান এই মুহূর্তে। অমৃতকালের আহ্বান। অন্তরীক্ষে নতুন ভারতের উদয়। আমি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশবাসীর সঙ্গে সঙ্গে আমার মনও এখানেই ছিল।

চাঁদে সফল অবতরণ করেছিল মাত্র তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ভারত।

অবতরণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগদানকারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনলাইনে যোগ দেন। সম্প্রচার দেখার জন্য সন্ধ্যার সময়ে স্কুল খোলা রাখা হয়। সংবাদপত্র এবং নিউজ চ্যানেল জুড়ে ব্যানার শিরোনাম ও অবতরণের ক্ষণগণনার টাইমার ছিল।

দেশের সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনা আয়োজন করা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে পবিত্র গঙ্গা নদীর তীরে শিশুরা জড়ো হয়ে নিরাপদ অবতরণের জন্য প্রার্থনা করে। বেশ কয়েকটি জায়গায় মসজিদে মোনাজাত আয়োজন করা হয়। রাজধানী নয়াদিল্লিতে গুরুদুয়ারা নামে পরিচিত একটি শিখ মন্দিরে পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি চন্দ্রযানের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভারত বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতিও অর্জন করছে।

রাশিয়ার চন্দ্রাভিযান লুনা-২৫ ব্যর্থ হয়েছে। তাই সবার মাঝে এক ধরণের কৌতুহল ও সংশয় ছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো সফল অবতরণের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল। তারা বলেছে, বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এ অভিযান চালিয়েছেন।

দক্ষিণ মেরুর এই এলাকাটিতে পানির চিহ্ন পাওয়া গেছে। চাঁদে পানি ও বরফ খুঁজে পাওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এটি বিশাল মূল্যবান সম্পদ। ২০০৯ সালে ইসরো চন্দ্রযান-১ অনুসন্ধানে চাঁদের পৃষ্ঠে পানি সনাক্ত করেছিল।

পানির উপস্থিতি ভবিষ্যতে চাঁদে যাওয়ার আশা জাগায়। পানির উত্স হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, সরঞ্জামগুলোকে শীতল করতে ও অক্সিজেন তৈরি করা যেতে পারে। মহাসাগরের উত্স সম্পর্কেও জানা যেতে পারে।

গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে সফল উৎক্ষেপণ হয় ‘চন্দ্রযান-৩’। মোট দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রম করেছে মহাকাশ যানটি। উৎক্ষেপণের ২২ দিন পর চন্দ্রযান-৩ পৌঁছেছে চাঁদের কক্ষপথে। তার আগে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ বলের টানে কক্ষপথে ঘুরছিল।

সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা