গাজীপুরে সেনা মোতায়েন: বিএনপির হ্যা, আ’লীগের না
ঢাকা জার্নাল: সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে গাজীপুরে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সংসদে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ
তবে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে আমাদের কি কোন অসুবিধা আছে ? কিন্তু সেনাবাহিনী ছাড়াইতো চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার প্রমান করেছে সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব।
বিকেল ৪ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরুর পরপরই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন মওদুদ আহমেদ।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, গাজীপুরে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। সেখানকার নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে সরকারি কর্মকর্তারা নেমে পড়েছে। সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। দলীয় সরকারের অধীনে অতিতেও কোন নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি। একমাত্র ১৯৭৩ সালে হয়েছিলো তাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এজন্য আমরা বলি কোন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না।
মওদুদ আরও বলেন, আপনারা যদি চান গাজীপুরে সুষ্ঠ নির্বাচন হোক, তাহলে সেখানে সেনাবাহিনী তলব করে সেই নির্বাচনে দিন।
বিএনপির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার কথার বরখেলাপ করেছেন। সংসদে আমাদের কাছে ওয়াদা দিয়েছিলেন, সদ্য সমাপ্ত হওয়া চার সিটি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের দ্রুত শপথের ব্যবস্থা করবেন। গত ১৫ জুন নির্বাচন শেষ হওয়ার পর গেজেট প্রকাশের ১২ দিন অতিক্রান্ত হলেও আজ পর্যন্ত বিজীয় মেয়রদের শপথ পাঠ করানো হয়নি।
মওদুদ বলেন, নির্বাচিত মেয়রদের শপথ না করানোর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। ২০০৯ সালের ৪৮টি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আমলে সব স্থানীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। এটাই যদি নিরপেক্ষতার নমুনা হয়।
জবাবে সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে দেন। বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ২০০১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করেননি। ঢাকা সিটিতে সাদেক হোসেন খোকার বিপরীতে আমরা কোন প্রার্থী দিতে পারিনি। আপনারা কি পৌর নির্বাচনে সেনাবাহিনী দিয়েছিলেন? বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকতো আর আপনি যদি আওয়ামী লীগ করতেন তবে কি আপনি বগুড়া থেকে উপনির্বাচনে বিজয়ী হতে পারতেন? হবিগঞ্জে আমাদেরকে বিজয়ী হতে দিতেন। সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে আমাদের কি কোন অসুবিধা আছে ? কিন্তু সেনাবাহিনী ছাড়াইতো চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার প্রমান করেছে সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, চার সিটিতে নির্বাচনের আগে ওনারা একই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু বিজয়ের পর তারা নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার পরে বললেন নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হয়নি। যতক্ষন পর্যন্ত ওনারা না জেতেন ততক্ষন পর্যন্ত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হয় না।
চার সিটিতে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে সরকারি দলের প্রার্থীরা জামানাত হারাতো সংসদে দেওয়া খালেদা জিয়ার এমন বক্তৃব্যের উদ্ধিৃতি টেনে তোফায়েল বলেন, দম্ভ – অহংকার করা ভালো না।
জিএসপি নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, একটি দেশের বিরোধী দলের নেতা জিএসপি নিয়ে কি বিবৃতি দিয়েছেন, কি লবিস্ট নিয়োগ করেছেন সেটা দেশবাসী জানে। জিএসপি স্থগিত করেছে বন্ধ করেনি। আবারও আমরা এই জিএসপি পাবো।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই সদস্য বলেন, আমরা যারা গ্রামকে সিটি কর্পোরেশন করেছি সেখানে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হবে না।
‘সামরিক স্বৈরশাসকেরা এই দেশকে ধ্বংস করেছে। এদেশের গণতন্ত্রের মূল্যবোধ নষ্ট করেছে’ যোগ করেন তোফায়েল।
আওয়ামী লীগ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অতীতে এ দলকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। নির্বাচন কমিশন মনে করলে সেনাবাহিনী দিবেন না হলে দিবেনা-এটা তাদের ব্যাপার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেটা প্রয়োগ করা হবে না। আওয়ামী লীগ অতীতেও স্থানীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি আর এবার করবেনা।
তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য রাখতে গিয়ে মওদুদ আহমেদকে স্ববিরোধী বলেও আখ্যায়িত করে বলেন, এ পর্যন্ত যতদিন সংসদ চলেছে তার প্রত্যেক দিনই তার পয়েন্ট অব অর্ডার ছিল।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২, ২০১৩।