গাজায় অ্যাম্বুলেন্স-স্বাস্থ্যকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা
হামাসের অতর্কিত হামলায় ভড়কে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়া ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে। নিরস্ত্র-নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার পাশাপাশি পুরো গাজার দখল নিতে চায় ইহুদি দখলদাররা।
দেশটির সেনাবাহিনী এ শহরে অ্যাম্বুলেন্স-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ও যানবাহনে ইসরায়েলি হামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তালাল ত্বহা নামে একজন প্যারামেডিক। তিনি গাজা শহরের সবচেয়ে বড় আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেন। গত শনিবার হামাস যখন ইসরায়েলে হামলা চালায়, তিনি একটি ফোনকল পেয়েছিলেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেবা দিতে নিজের দল নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়েন।
হামাসের হামলার পর ইসরায়েলিরা যখন প্রতিরোধ করছিল গাজার অনেক লোক আহত হয়। তিনি তিনটি গাড়িতে নিজের টিম নিয়ে শহরের পূর্ব কবরস্থানের আশপাশে একটি এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ত্বহার দলটি সাহায্যের জন্য কান্নার শব্দ অনুসরণ করছিল। এ সময় পুরো শহর ছিল অন্ধকার।
ত্বহা বলেন, হঠাৎ আমরা একটি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হলাম। আমরা নিরাপত্তার জন্য দৌড়াচ্ছিলাম। আমি জরুরি দলটিকে নিয়ে সালাহ আল-দিন রোডে আমাদের গাড়িতে উঠে পড়ি। আমরা ওই এলাকা ছাড়ার সময় আরেকবার বিমান হামলা হয়। আমার তিন সহকর্মী এ সময় নিহত হন; আমিও আহত হই।
ত্বহা আল জাজিরাকে বলেন, আমাদের মিশন মানবিক, আমরা শুধু মানবিক সেবা প্রদান করি। কিন্তু সেদিন কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
শুধু এই ঘটনাটিই নয়। দখলদাররা নিজেদের ইচ্ছামতো গাজা উপত্যকার অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোয় বিমান হামলা চালাচ্ছে, গুলি করছে। এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন। এ ধরনের আক্রমণ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ইসরায়েলের এসব হামলাকে অবান্তর হিসেবে দেখছে গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসা সংস্থাগুলো।
বুধবার (১১ অক্টোবর) ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) গাজার স্বাস্থকেন্দ্রগুলোয় ও চিকিৎসকদের দলটিতে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, চিকিৎসক দলটিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। চার প্যারামেডিককে হত্যা করা হয়েছে। এসব নিন্দিত কর্মকাণ্ড। চিকিৎসা কর্মীদের টার্গেট করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবতার জন্য একটি গুরুতর লঙ্ঘন।
পিআরসিএস এই যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহিতা দাবি করেছে। অবিলম্বে তদন্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচারের আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যাম্বুলেন্সের ওপর সরাসরি ও নিয়মতান্ত্রিক আক্রমণ নিন্দনীয়। অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিগুলির স্পষ্ট বিরোধিতা করা।
গত শনিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকশ শিশু ও নারী রয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি নাগরিক।