খোকার ১৩ বছরের কারাদণ্ড
ঢাকা: বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেক হোসেন খোকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১৩ বছরের কারদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার তিন নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ রায় দেন
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ১ জুলাই চার্জশিট দাখিল হয়। চার্জশিট দাখিলের পর মামলা বাতিলের জন্য সাদেক হোসেন খোকা হাইকোর্টে আবেদন করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাদেক হোসেন খোকা ৯ কোটি ৭৬ লাখ ২৮ হাজার ২৬১ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ৬০৯ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। মামলাটিতে তার স্ত্রী মিসেস ইসমত আরাও আসামি।
মামলায় খোকার ছেলে ইসরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেক আসামি থাকলেও তাদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সাদেক হোসেন খোকা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। এরপর ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল রমনা থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদের বিবরণীতে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৭ টাকার সম্পত্তি আয়ের তথ্য গোপনসহ ২৭ কোটি ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭৫ টাকার সম্পত্তি জ্ঞাত আয়ের বাইরে অর্জনের অভিযোগে সাদেক হোসেন খোকা, তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বাদী শামসুল আলম জানান, খোকার ও তার পরিবারের পক্ষে দুদকে যে সম্পত্তির হিসাব বিবরণী দাখিল করা হয়েছে তা নিয়ে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করা যায় নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল খোকা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। গত বছর ৬ ডিসেম্বর সাদেক হোসেন খোকা তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এর পরপরই খোকার সম্পত্তির অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দুদক কর্মকর্তা আখতার হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে আখতার হোসেন ঢাকার বাইরে বদলি হলে দু’দফায় দুদক কর্মকর্তা সাইদুর রহমানসহ আরও দু’জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে তারা খোকার সম্পত্তির অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি খোকার সম্পত্তির অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের সহকারী পরিচালক শামসুল আলমকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি গত মাসের শেষ সপ্তাহে অনুসন্ধান শেষ করেন। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়ার ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করার কথা থাকলেও খোকার ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, দাখিল করা হিসাব বিবরণীতে খোকা ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৬ টাকার সম্পত্তি আয়ের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৩ হাজার ৪০৮ টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। খোকার এই দুর্নীতিতে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী ইসমত আরা হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক ও ছেলে ইশরাক হোসেন।
গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর গুরুতর অপরাধ দমন সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির এক সভায় সন্দেহভাজন ৮০ দুর্নীতিবাজের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ওই দিনের সভায় চূড়ান্ত হওয়া ৮০ জনের নামের তালিকা ২৮ সেপ্টেম্বর পত্রিকা মারফত প্রকাশিতও হয়। ওই তালিকায় মেয়র সাদেক হোসেন খোকার নাম শীর্ষে ছিল। এরপর গত বছর ৪ অক্টোবর দুদক চতুর্থ দফায় ৩৫ জন সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকা প্রকাশ করে, এই তালিকাতেও খোকার নাম সবার শীর্ষে ছিল। গত ১৮ নভেম্বর খোকার কাছে সম্পত্তির হিসাব বিবরণী চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক। এর আগে গত ১০ নভেম্বর দৈনিক সংবাদে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত মেয়র খোকা ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির হিসাব প্রকাশিত হয়।
দুদক থেকে সরবরাহ করা খোকার সম্পত্তির হিসাব বিবরণীতে বলা হয়েছে, খোকার নামে রাজধানীর গোপীবাগে ২টি বাড়ি, আর কে মিশন রোডে ৩য় তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, গুলশানে ১টি ৬ তলা বাড়ি আছে। খোকার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলের নামে ৬টি ফ্ল্যাট আছে ঢাকায়। জমা দেয়া হিসাব বিবরণী অনুযায়ী খোকার নামে মুন্সীগঞ্জে প্রায় ৩২ শতাংশ, গাজীপুরে ১ হাজার ১৪২ শতাংশ জমি আছে। তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় ৮টি প্লট ও গাজীপুরে ১ হাজার ৬৭৪ শতাংশ জমি আছে বলে হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জমা দেয়া হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, খোকার ছেলের নামে বসুন্ধরা সিটিতে ১টি দোকান আছে। খোকা ও তার স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকার শেয়ার আছে, শেয়ার কেনাবেচা করে তিনি আয় করেছেন প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। খোকার ব্যবসায়িক মূলধন ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। তার এক ছেলের নামে ২৫ লাখ টাকার এফডিআর ও আরেক ছেলের নামে ১৫ লাখ টাকার প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র আছে। খোকার নামে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র আছে। তিনি ২টি গাড়ির (লেক্সাস ও টয়োটা) মালিক। এছাড়া খোকা আড়াই লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কারের মালিক। তার নিজ ও যৌথ নামে ২৭টি ব্যাংক হিসাব আছে। স্ত্রী ও মেয়ের নামে যথাক্রমে ১১টি ও ২টি ব্যাংক হিসাব আছে।
দুদক থেকে সরবরাহ করা হিসাব বিবরণী সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত খোকা ও তার পরিবারের সদস্যরা এসব সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। দুদকের সরবরাহ করা এ তথ্য অবশ্য সঠিক নয় বলে সাদেক হোসেন খোকা এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন।