ক্ষেতমজুররা ভিক্ষা নয়, কাজ করে বাঁচতে চায়
ক্ষেতমজুর সমিতির জাতীয় সম্মেলন, ক্ষেতমজুররা ভিক্ষা নয়, কাজ করে বাঁচতে চায় ,গ্রামীণ সর্বহারা ক্ষেতমজুরদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির নবম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ক্ষেতমজুররা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষেতমজুরদের অবস্থান সবচেয়ে প্রান্তিক। তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত। ক্ষেতমজুররা দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, ভিক্ষা নয়, তারা কাজ করে বাঁচতে চায়।
আজ ৫ নভেম্বর ময়মনসিংহ টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত দু‘দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে ক্ষেতমজুর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বক্তব্য রাখেন। সমিতির সভাপতি শামছুজ্জামান সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)’র সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী, ক্ষেতমজুর সমিতির কার্যকরী সভাপতি সোহেল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ডা. ফজলুর রহমান, সিপিবি’র ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. এমদাদুল হক মিল্লাত, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভানেত্রী ফেরদৌস আরা মাহমুদ হেলেন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার। ভ্রাতৃপ্রতিম বিদেশী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি কমরেড থিরুনাভু কাসারু, অল নেপাল পিজান্ট ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমরেড বলরাম বনসকোটা, ন্যাশনাল ফার্মারস ফেডারেশন-শ্রীলংকার সাধারণ সম্পাদক কমরেড জয়ালাথ বানদারা সেনেভিরাথনা।
সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ময়মনসিংহ জেলা সংসদ ও লোক সাংস্কৃতিক দল, ময়মনসিংহের শিল্পীরা।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ বলেন,“বর্তমান সমাজ লুটেরা ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করছে। ক্ষেতমজুরদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী সমাজ ভেঙ্গে ফেলতে হবে।এজন্য ক্ষেতমজুর সমিতিকে শক্তিশালী করতে হবে”।
কমরেড সেলিম বলেন, “বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ বলা হচ্ছে। জনপ্রতি ১ লক্ষ টাকা আয়ের হিসাব দেওয়া হচ্ছে, তাহলে ক্ষেতমজুরদের জীবন এত কষ্টের কেন? গ্রামীণ বরাদ্দ কোথায় যায়? লুটপাটকারীদের প্রত্যাখ্যান করে গরিব-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের রাজত্ব কায়েম করতে হবে। সেজন্য গ্রামে গ্রামে সংগঠিত জাগরণ ঘটাতে হবে।”
অন্য বক্তারা বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেতমজুরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। ক্ষেতমজুররা সংগঠিত হয়ে ধনিক শ্রেণীরর ক্ষমতার রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেবে। এই সম্মেলনে হাজার হাজার ক্ষেতমজুরের অংশগ্রহণ সেই বার্তা দিচ্ছে।”
সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে হাজার হাজার ক্ষেতমজুরের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আগামীকাল কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে এবং নতুন কমিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নবম জাতীয় সম্মেলনের সমাপ্তি হবে।