কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় দেশবাসী
ঢাকা জার্নাল: প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বহাল রাখেন।
রায়ের পর সোমবার রাতে তার ফাঁসি কার্যকরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করার যায়। কিন্তু আদালতের ওই রায়ের কপি কারাগারে না পৌঁছানোয় ফাঁসি কার্যকরে অপেক্ষা বাড়ে। মঙ্গলবার ওই রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছাতে পারে বলে জানা গেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী সোমবার রাতে ফাঁসি কার্যকর সমন্ধে সাংবাদিকদের জানান, তারা আদালতের রায়ের কপি হাতে না পাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। পরবর্তী সময়ে রায়ের কপি পেলে সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।
রায় বহাল থাকার পর কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা সোমবার রাতে তার সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল জানান, তার বাবা মনোবল হারাননি। তিনি এখনো বেশ শক্ত রয়েছেন। এ বিচার অন্যায় ও মিথ্যা বলে কামারুজ্জামান তার পরিবারের কাছে দাবি করেন বলে জানান হাসান ইকবাল।
রায়ের কপি হাতে না পেয়ে থাকলে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন ডাকা হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফরমান আলী বলেন, ‘যেহেতু আদালত রায় দিয়েছেন, সে কারণে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়েছে। যে কোনো সময় রায়ের কপি কারাগারে আসতে পারে। সেজন্য তাদের কারাগারে ডাকা হয়েছে।’
রাতে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর কারাকর্তৃপক্ষের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরপরই কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হবে। সেই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। যদি তিনি প্রাণভিক্ষা চান তাহলে সে অনুযায়ী তাকে সুযোগ দেওয়া হবে। আর যদি না চান তাহলে আইনানুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি কামারুজ্জামানের পরিবার। এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আরেক নেতা কাদের মোল্লাও প্রাণভিক্ষা চাননি।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার আমিনুল ইসলাম জানান, কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের কপিতে আজ স্বাক্ষর করেননি বিচারকরা। তারা আগামীকাল স্বাক্ষর করতে পারেন।
সোমবার সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের আদেশের কপি আমরা এখন পর্যন্ত হাতে পাইনি।’
নিয়মানুয়ায়ী রায়ের কপি রেজিস্ট্রার হাতে পাওয়ার পর এটিতে তিনি স্বাক্ষর করবেন। তারপর এটি পাঠানো হবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। তারপর ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।
ফাঁসির দণ্ডাদেশের বিপরীতে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন সোমবার খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তার ফাঁসির আদেশও বহাল রাখেন আদালত। এরপর সারা দেশে গুঞ্জন ওঠে যে, আজ রাতেই কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।
কারাগারেও ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। কফিন, সাদা কাপড়, শামিয়ানা, বাঁশসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কারাগারের ভেতরে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে যান তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। এমনকি কারাগারের আশপাশেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ৭, ২০১৫