ওকলাহোমায় টর্নেডোতে নিহত ৯০
ঢাকা জার্নাল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমায় খুবই শক্তিশালী এক টর্নেডোর আঘাতে ৯০ জনের ওপর লোক নিহত হয়েছে। ঝড়ের তান্ডবে ওকলাহোমা সিটির ক্ষতিগ্রস্ত শহরতলী এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
নিহতদের মধ্যে অন্তত বিশজন শিশুও রয়েছে। তাদের প্রাইমারি স্কুলভবন টর্নেডোর আঘাতে ভেঙে পড়লে তাদের প্রাণহানি ঘটে। স্কুলের ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো শিশু চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারা রাত ধরে উদ্ধারকারীরা কুকুর নিয়ে চাপা পড়ে থাকা মানুষজনকে উদ্ধারের কাজ চালিয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে মুর নামে ছোট একটি শহর এলাকার ওপর এই টর্নেডো তান্ডব চালায় প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট ধরে এবং সবচেয়ে ক্ষতি হয় ওই এলাকায় ।
মার্কিন আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই টর্নেডোর ব্যাস ছিল তিন কিলোমিটার। শক্তিশালী ঝড় গাড়িগুলো উড়িয়ে নিয়ে ফেলে বাড়িঘর এবং দোকানবাজারের ধ্বংসস্তূপের ওপর।
প্রেসিডেন্ট ওবামা এটিকে বড়ধরনের বিপর্যয় ঘোষণা করেছেন এবং কেন্দ্রীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ধারকাজে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুর এলাকায় প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ বাস করত। স্থানীয় সময় বেলা প্রায় তিনটে নাগাদ এই ঝড় সেখানে আঘাত হানে।
ওকলাহোমার প্রধান মেডিকেল এক্সামিনারের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে মুরে প্লাজা টাওয়ারস এলিমেন্টারি স্কুলের ওপর ঝড় সরাসরি আঘাত হানলে স্কুলবাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং দেওয়াল ধসে পড়ে।
ওকলাহোমার লেফটন্যান্ট গর্ভনর টড ল্যাম্ব বলেছেন, ‘মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গেছে স্কুলভবনটি। স্কুলের প্রায় জনা পঁচিশেক শিশু এখনও নিখোঁজ। স্কুলের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কিছু মৃতদেহ আমরা উদ্ধার করেছি। পরিস্থিতি খুবই মর্মান্তিক।‘
এলাকার আরেকটি স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,তবে সেখানে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে বের করে নিতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
লেফটন্যান্ট গর্ভনর ল্যাম্ব বলেছেন, মুর টর্নেডোর জন্য প্রস্তুত ছিল, তবে এত শক্তিশালী ঝড় আসছে তা তারা বুঝতে পারেন নি। ‘সতর্কতা জারি করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এত শক্তি নিয়ে দুই মাইল ব্যাসার্দ্ধের এই ঝড় ৪৫ মিনিটের জন্য যেভাবে তান্ডব চালিয়েছে, তার মুখে যা পড়েছে তাই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এর থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন ছিল।‘
ওকলাহোমায় অ্যালিস্টেয়ার লেইটহেড বলছেন ওই এলাকায় বহু টর্নেডো খোলা এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, কিন্তু এবারের ঝড় আবাসিক এলাকায় আঘাত হানায় এত প্রাণহানি ঘটেছে।
বহু বসতবাড়ি সেখানে শক্ত মাটির ওপর তৈরি ছিল, মাটির নিচে সেগুলোয় কোনো ঘর ছিল না। কাজেই বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।
ওকলাহোমার নরম্যানে জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ রিক স্মিথ বলেছেন, ‘আবহাওয়া দপ্তরে আমার বিশবছরের কর্মজীবনে এত শক্তিসম্পন্ন ঝড় আমি দেখিনি।‘
মার্কিন আবহাওয়া দপ্তর বলছে টর্নেডো পরিমাপের ৫ পয়েন্ট ফুজিতা স্কেলে এই ঝড়ের শক্তির মাত্রা ছিল ৪- অর্থাৎ এটি ছিল ঝড়ের শক্তির পরিমাপে দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়।
মুর শহরে বিশাল এক টর্নেডো আঘাত হেনেছিল ১৯৯৯ সালের মে মাসে। সেসময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল এ যাবৎ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের রেকর্ড।
কিন্তু ওকলাহোমার হাইওয়ে টহল দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে এবারের টর্নেডোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৯৯৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে।