এরশাদের নির্বাচনী নতুন নাটক
ঢাকা জার্নাল: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, তাঁর দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না। বনানীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ আজ এ ঘোষণা দেন। সব দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এরশাদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের সময় তাঁর সঙ্গে দলের আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
তবে সর্বদলীয় সরকারে জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা-মন্ত্রীরা থাকছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে পরে জানাব।’ তিনি দলের সব নেতা-কর্মীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এরশাদ গতকাল সোমবার বেলা তিনটার পর মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ভিডিও দেখুন-
ঠিক এ সময় কেন নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত—এ প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘আমি বলেছিলাম সব দল নির্বাচনে না গেলে আমি নির্বাচনে যাব না। বলেছিলাম সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরাপদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমরা নির্বাচনে থেকে যাব। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হলো। এখন দেশের অনিশ্চিত গন্তব্য কোথায় গিয়ে থামবে, তা শুধু সর্বশক্তিমান আল্লাহরই জানা থাকল।’
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, ‘তোমরা আমাকে বিদ্রূপ করো, বলো, এরশাদ সকালে এক কথা, বিকেলে এক কথা বলে। তোমাদের বুঝতে হবে। আমি না থাকলে দল থাকে না। জেলে গেলে দলের অস্তিত্ব থাকে না। আমাকে অনেক কিছু ভাবতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘এ কথা সত্য, আমি এক জায়গায় গোঁ ধরে থাকি না। কারণ, রাজনীতিতে জেদ অমঙ্গল ডেকে আনে—যা বর্তমান সময়ে চলছে। একজন গর্ভবতী মা আগুনে পুড়ে কাতরাচ্ছেন। ওই অনাগত শিশুর জন্য কোন দেশ রেখে যাওয়ার জন্য আমি আমার কথায় অনড় থাকব? তাই আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, ওই আগুনে পোড়া মায়ের অনাগত সন্তানের জন্য একটি শান্ত, সুশীতল, শান্তিময় দেশ গড়ার জন্য সমালোচনার ভাষ্য অনুসারে শুধু সকাল-বিকাল কেন, প্রতি মুহূর্তেও যদি অবস্থান বদলাতে হয়, আমি তা-ও করতে পারব।’
এরশাদ দল থেকে বহিষ্কৃত জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘অনেকে দল থেকে চলে গেছেন, তাঁদের আমি ফিরে আসার অনুরোধ জানাই।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব, মামলার ভয় দেখানো, গাজীপুর নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল ইত্যাদি নানা বিষয়ের অবতারণা করেন। তিনি বলেন, রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেই তাঁকে মামলা-জুলুম থেকে নিস্তার দেওয়া হত। এরশাদ আরও বলেন, ‘আমি শৃংখলিত রাজনীতিবিদ। শৃংখলমুক্ত হয়ে বাঁচতে চাই।….আমি না থাকলে দল চলে না। আমার দুর্বলতা আমি একজন বিকল্প চেয়ারম্যান তৈরি করতে পারিনি’।
এরশাদ বলেন, ‘লোকে বলে আমাকে নাকি এক হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন আমি এ সিদ্ধান্ত কী করে নিলাম? তিনি মঞ্জুর হত্যা মামলায় তাঁকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। এরশাদ বলেন, ‘মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যার জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ঘটনার ১৪ বছর পর। কোনো মামলায় যখন আমাকে আটকানো যাচ্ছিল না, তখন মঞ্জুর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলা আজ ১৮ বছর ধরে চলছে। ১৩ জন বিচারক বদল হয়েছেন। আমি ভেবেছিলাম রায় পাব। অধিকতর শুনানির জন্য ২১ জানুয়ারি দিন ঠিক করা হয়েছে। তার মানে আমাকে আবার ঝুলিয়ে রাখা হলো।’
ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ৩, ২০১৩।