এখন হেজবুল্লাহ আর ইরান কী করবে?
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
ইজরায়লের হামলায় লেবাননে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃতুর পর সতর্ক অবস্থানে আছে ইরান। এর মধ্যেই গোপন আস্তানায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে। তবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধের পাল্টা পদক্ষেপ নিতে ইরান হিজবুল্লাসহ অন্য নিয়ন্ত্রণাধীনগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
খামেনিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার বড় কারণ হলো ইরান জানে ইজরায়েলের সক্ষমতা সম্পর্কে। গত জুলাই মাসে রাজধানী তেহরানের বাড়িতে ঢুকে খুন করা হয় হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলে ইরান মনে করে।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে কোন পথে এগুবে হেজবুল্লাহ। ইজরায়েল দাবি করছে শুধু নাসরুল্লাহ নয়, হেজবুল্লাহর সামরিক নেতৃত্বের পুরোটাই নির্মূল করা হয়েছে। একের পর এক ইজরায়েলি আঘাতে বিপর্যস্ত হেজবুল্লাহ ও তার পালনকর্তা ইরান কতটুকু কী করতে পারবে, সে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। হেজুল্লাহর কমান্ড কাঠামো ভেঙে পড়েছে, মারা গেছেন এক ডজনেরও বেশি সামরিক উচ্চ পর্যায়ের নেতা। পেজার ও ওয়াটকি বিস্ফোরণ, ইজরায়েলের বিমান হামলায় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামও ধ্বংস হয়ে গেছে।
এরপরও প্রতিশোধের কথা বলছে ইরান ও হেজবুল্লাহ। হেজবুল্লাহ শত শত যোদ্ধা আছেন। তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রও আছে। এখন এসব অস্ত্র ব্যবহারের তাগিদ আসবে সংগঠনের ভেতর থেকে যদিও একটা নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যদি এসবের ব্যবহার শুরু হয়, বেসামরিক লোকজন মারা যান, তাহলে ইজরায়েল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে, আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে। তবে ইজরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী যে, হেজবুল্লাহর মিশাইল তেমন কোনো প্রভাবই রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন পশ্চিমা সামরিকবোদ্ধারা।
ইরানের ভূমিকা নিয়েও কথা উঠছে। নাসরুল্লাহর মৃত্যু ইরানের জন্যও বড় আঘাত ও পরাজয়। ইরান হেজবুল্লাহকে কতটা আপন মনে করে, তার প্রমাণ হলো নাসরুল্লাহ মৃতুতে দেশটি পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে। ইরান আসলে ভয় পেয়েছে। দেশটি তার সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে সরিয়ে নিয়েছে নিরাপদ স্থানে। এখন পর্যন্ত নিজের দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে হামাস নেতা ইসমাইল হার্নিয়াকে হত্যার জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি ইরান।
পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত বেশ কিছু সশস্ত্র গ্রুপ আছে, সেগুলো এখন অনেকটাই পর্যদুস্ত। হামাস, হেজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি ও আরও অসংখ্য সশস্ত্র সংগঠন প্রতিপালন করে আসছে ইরান। ইরান এখন সব গোষ্ঠীকে বলতে পারে, ইজারায়েল ও মার্কিন স্থাপনা বা ব্যক্তিকে হামলার আওতায় আনতে। এ আশঙ্কা করছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। তবে যেটাই করুক, তা হবে ইজরায়লের সঙ্গে যুদ্ধ, যেখানে ইরানের বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই।
লেখক: সাংবাদিক