Lead

ঈদের ছুটি ২ দিন বাড়ানোর দাবি

আসন্ন ঈদযাত্রায় যাত্রীদের দুর্ভোগ, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ঈদের ছুটি দুই দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ ঢাকা ও আশেপাশের জেলা থেকে ৮ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবেন। এর মধ্যে ঈদের আগের চার দিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে ৪ লাখ, প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় ১ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।

গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাস, ট্রেনের ছাদে এবং খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এছাড়া আন্তজেলা যাতায়াত করবে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি যাত্রী। এতে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা এবার রোজা ৩০টি হলে ১১ এপ্রিল ঈদ হতে পারে। ঈদের আগে ১০ এপ্রিল মাত্র এক দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত রয়েছে পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। এ কারণে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও লম্বা ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়ি যাবেন। তাই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ৯ ও ১০ এপ্রিল প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়বেন। অথচ আমাদের গণপরিবহনগুলোতে ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সব পথে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। ৮ ও ৯ এপ্রিল ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে ৫ এপ্রিল থেকে সবাই স্বচ্ছন্দে, ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবেন। গণপরিবহন সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি থেকেও মুক্তি মিলবে। এ কারণে ৮ ও ৯ এপ্রিল ২ দিন ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব আরও বলেন, ‘এবারের ঈদে দেশে ৭১৪টি স্পটে যানজট হতে পারে এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ১৪০টি স্পটে প্রখর নজরদারি দরকার। ১০টি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ২১৮টি অতিঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনার স্পটের বিষয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সর্তক করেছে। এ সব স্পটেই ৬০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর প্রতিটি সড়কের ফুটপাত হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করার দাবি জানাই।’

কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও টোল পয়েন্টগুলো যানজটমুক্ত করতে হবে।’ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কেবল কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।