আন্তর্জাতিক

আমি মুসলিম ও ইসলামবিরোধী নই: মোদি

দেশের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিজেপি সরকার কোনও ভেদাভেদ করে না বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। এসময় মোদি সাফ জানান, তিনি মুসলিম বা ইসলামবিরোধী নন। এই মন্তব্যটি তিনি এমন সময় করলেন, যখন লোকসভার নির্বাচনি প্রচারে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা বারবার বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুসলিমবিরোধী বা ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ তুলছেন। মোদির এমন মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সাক্ষাৎকারে মোদি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী নই। বিরোধীরা আমার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আত্মসমীক্ষা করুন এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন কারা আপনাদের ভালো চায়।’

এসময় এই প্রসঙ্গে বিগত কংগ্রেস আমলে ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচারের পাল্টা অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর আমল থেকেই নিজেদের মুসলিম মিত্র বলে তুলে ধরে বাকিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে আসছে কংগ্রেস।’

মুসলমানদের প্রতি তার সরকারের অবদান তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘তবে মুসলিম মা বোনেরা এটি উপলব্ধি করেছেন যখন আমি তিন তালাকবিরোধী আইন করে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছি। তারা ভালোভাবেই বুঝেছেন কে তাদের ভালো চান।’

ভারতের মুসলিমদের আত্মসমীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এগোচ্ছে। আপনারা যদি পিছিয়ে থাকেন, তবে তার কারণ অনুসন্ধান করুন।’ প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, কংগ্রেস আমল থেকেই মুসলিমদের প্রতি সবচেয়ে বেশি অবিচারের ঘটনা ঘটেছে।

কোভিড ভ্যাকসিন এবং আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যবিমা কার্ডের বিষয় উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘মুসলিম ভাই-বোনেরা জানেন আমি একজন সাচ্চা ব্যক্তি। কোনও ভেদাভেদ আমি করিনি। আমি কখনও বলিনি মুসলিমরা সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন না। বরং আমি বলেছি, ধর্মের ভিত্তিতে তা দেওয়া যায় না। মুসলিম, খ্রিষ্টান, হিন্দু, পার্সি নির্বিশেষে সব ধর্মের গরিব মানুষ সংরক্ষণের সুবিধা প্রাপ্য। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরাও এখন বুঝে গেছেন যে, এই ভোটব্যাংক রাজনীতিবিদদের থেকে তাদের এখন দূরে থাকাই শ্রেয়।’

কয়েকদিন আগেই উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে একইভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন মোদি। ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘মুসলিমদের আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য কোনও কাজই করেনি কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি। আমি যখন পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি, তখন এদের লোম খাড়া হয়ে যায়। উপরে থাকা লোকেরা টাকা লুট করেছে আর অনগ্রসর শ্রেণির মুসলমানদের তাদের নিজেদের অবস্থাতেই ছেড়ে দিয়েছে।’

তিন তালাকের প্রসঙ্গ টেনেও কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘তিন তালাকের ফলে কত মেয়ের জীবন যে নষ্ট হয়েছিল। শুধু তাদের জীবনই নষ্ট হতো না, দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতেন তাদের পরিবারও। তবে তিন তালাক বিষয়ে আইন করে মোদি তাদের জীবনকে সুরক্ষিত করেছে।’

শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের আমলে হজযাত্রার সুবিধার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে হজের কোটা কম থাকায় অনেক সমস্যা হতো। এর মধ্যে টাকা লেনদেনের বিষয়টিও ছিল। শুধু হাতে গোনা কিছু লোক হজে যেতে পারতেন। আমি ক্ষমতায় আসার পর সৌদি যুবরাজের কাছে ভারতীয় মুসলমানদের হজের কোটা বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম। এতে শুধু যে হজের কোটা বেড়েছে তা নয়, ভিসার নিয়মও আরও সহজ হয়েছে। আগে মুসলিম নারীরা একা হজে যেতে পারতেন না, এখন যেতে পারছেন। ফলে অনেকের হজে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অনেক মা বোন এ জন্য আমাকে আশীর্বাদ করেছেন।’