শিক্ষা-সংস্কৃতি

অসুস্থতার ছুটি নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন এক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অনুমতি না নিয়ে নেদারল্যান্ডসে পাড়ি জমিয়েছেন। অফিসিয়াল তবে ছুটি না নেওয়ায় দুই শিক্ষককে সশরীরে হাজির হয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশনা (শোকজ) দিয়েছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।

দুই শিক্ষক হলেন- উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন খাশের হাট বাজার সংলগ্ন চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও সহকারী শিক্ষক ইকরাম হোসেন।

চরবংশি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের ১১ শিক্ষকের মধ্যে তিন জনই ছুটিতে রয়েছেন। এর মধ্যে সাবিনা নামের এক সহকারী শিক্ষক ৬ জুন থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। সহকারী শিক্ষক ইকরাম ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এবং প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালও ৫ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মধ্যে চিকিৎসাজনিত ছুটিতে থাকবেন বলে দরখাস্তে লেখা রয়েছে।

কয়েকজন শিক্ষক জানান, স্কুলটি ১৯৩৬ সালের পর টিনের ও ১৯৭৩ সালে আধাপাকা হলেও ২০০৪ সালে একতলা ভবন করে দিয়েছে সরকার।। উপজেলার মধ্যে এ গ্রেডের স্কুলটিতে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তিন শিক্ষক ছুটিতে থাকায় বাকি শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়ছে। নিজেদের নির্ধারিত ক্লাস নেওয়ার পরও নিতে হচ্ছে ছুটিতে থাকা তিন শিক্ষকের প্রক্সি ক্লাস।

স্কুলটিতে গিয়ে শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেখানো যাবে না বলে সাংবাদিকদের জানান বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসের অনুমতি লাগবে এটা দেখতে। ওই দুই শিক্ষক চিকিৎসাজনিত ছুটিতে আছেন। এখন কোথায় আছেন তা আমাদের জানা নেই।

সহকারী শিক্ষক ইকরাম হোসেনের বাবা বলেন, ইকরাম চিকিৎসার জন্য নেদারল্যান্ডসে গেছে। আমার ছোট ছেলে ডাক্তার। সে এবং আমার মেয়ে নেদারল্যান্ডসে থাকে। ইকরাম তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য গেছে আবার সে তার কর্মস্থলে চলে আসবে।

প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের স্ত্রী রোকসানা বলেন, আমার স্বামী বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আছে।

এরপর মোস্তফা কামালের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। মেডিক্যালের কত নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাও জানেন না তার স্ত্রী।

তবে তার এক প্রতিবেশী জানান, মোস্তাফা কামাল কয়েকদিন আগে চাকরির উদ্দেশে নেদারল্যান্ডসে গেছেন। এর আগেও মোস্তাফা কামাল তিন মাস নেদারল্যান্ডসে থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।

এই বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি জানি তারা চিকিৎসাজনিত ছুটিতে আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন তা জানা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, সহকারী শিক্ষক ইকরাম ও প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল দেশের মধ্যে ৬০ কর্মদিবসের জন্য চিকিৎসাজনিত ছুটিতে রয়েছেন। তাদের বিদেশে যাওয়ার অনুমতি নেই। এর আগেও তারা অনুমতি ছাড়া তিন মাস অনুপস্থিত ছিলেন। তিন মাসের অনুপস্থিত থাকায় দুই বছরের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই শাস্তি এখনও চলমান। এবারও বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে শোকজ করা হয়েছে। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।